বিকাল ৩:৪০ । বৃহস্পতিবার । ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ । ২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি বার্তা
  5. খেলাধুলা
  6. খোলা কলাম
  7. চাকরি
  8. জাতীয়
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. পর্যটন
  12. ফিচার
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মতামত

‘দুষ্প্রাপ্য’ বিনামূল্যের বই সহজলভ্য দোকানে

pp
জানুয়ারি ১৯, ২০২৫ ৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

Spread the love

পিপি ডেস্ক: দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণির নতুন বছরের পাঠ্যবইয়ের সংকট রয়েছে। কবে নাগাদ এ সংকট কাটবে, সে বিষয়ে কোনো সুখবর দিতে পারছে না জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই দুষ্পাপ্য হলেও অনেকটা সহজলভ্য দোকানে। নীলক্ষেত, বাংলাবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বই বিক্রির দোকানে মিলছে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির সব পাঠ্যবই। প্রাথমিকের প্রতি শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পাঠ্যবইয়ের প্যাকেজ বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকায়। আর মাধ্যমিকের প্রতি শ্রেণির পাঠ্যবই প্যাকেজ সাড়ে ৪ হাজার টাকায় ক্রয় করা যাচ্ছে। সন্তান লেখাপড়ায় পিছিয়ে যাবে, এ দুশ্চিন্তা থেকে অনেক অভিভাবক এসব বই দোকান থেকে কিনছেন বেশি টাকা দিয়ে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কালোবাজারিতে পাঠ্যবই বিক্রিতে জড়িত কিছু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তারা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি দেখিয়ে বরাদ্দের বেশি বই গ্রহণ করেছেন। এরপর বাড়তি বইগুলো অধিক মূল্যে বিক্রি করেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এক শ্রেণির প্রধান শিক্ষকরাও এই সিন্ডিকেটে জড়িত। সারা দেশ থেকে আসা সেসব বই রাজধানীর নীলক্ষেত ও বাংলাবাজারে বিভিন্ন বইয়ের দোকানে বিক্রি হচ্ছে। সিন্ডিকেট করে পাঠ্যবই বিক্রয়ের সঙ্গে এক শ্রেণির অসাধু ছাপাখানার মালিকও জড়িত। বেশি মুনাফা পেতে তারা পাঠ্যবই বিক্রি করছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে প্রতিটি পাঠ্যবই ছাপাতে খরচ হয় ৩০ থেকে ৫০ টাকা। সেগুলো বিক্রি করা হয় ১৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। আর দোকানে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানিয়েছে, দেশের অনেক জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বেশি বইয়ের চাহিদা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকেই কালোবাজারে চলে যাচ্ছে বই। এছাড়া অনেক স্কুলও বেশি বইয়ের চাহিদা দিয়েছে। সেসব স্কুল এখন বাজারে বই বিক্রি করে দিচ্ছে। এছাড়া কিছু মুদ্রণপ্রতিষ্ঠান অধিক মুনাফার লোভে পাঠ্যবই বিক্রি করছে। বাংলাবাজার, সূত্রাপুর, আরামবাগ ও নয়াপল্টনের মুদ্রণ, ছাপা ও বাঁধাই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও বই কালোবাজারে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, সিন্ডিকেট করে খোলা বাজারে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে একাধিক সংস্থা মাঠে নেমেছে। এনসিটিবির মনিটরিং টিমও কাজ করছে। প্রিন্টারদের ডেকে এনে জবাব চাওয়া হয়েছে। দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে। এদিকে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই বিক্রির প্রমাণ পেয়েছে সরকার। গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বুধবার নীলক্ষেতের বেশ কিছু লাইব্রেরিতে অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে পাঠ্যবই পেয়েছে। চায়না বুক হাউজ, মিজি বুক হাউজ, বইয়ের দেশ-২ এবং মামুন বুক হাউজসহ কয়েকটি লাইব্রেরি থেকে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই উদ্ধার করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এসব দোকানের মালিকদের জরিমানা করা হয়েছে। তবে কালোবাজারে বই ছাড়ার সিন্ডিকেটের মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।

২০২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম থেকে নবম-দশম শ্রেণির সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে এখনো সরবরাহ করতে পারেনি সরকার। এ বছরের প্রথম দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া হয়েছে নামমাত্র কিছু বই। পরে আরও কিছু বই সরবরাহ করা হলেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এখনো বই পায়নি। রাজধানীর পাঁচটি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, মাধ্যমিকের একটি বইও পায়নি অনেকে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, যৎসামান্য বই পাওয়া গেছে, তা বিতরণ করা হয়েছে। বাকি বই হাতে পেলে সঙ্গে সঙ্গে তা শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হবে। জানা গেছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটির মতো শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ৪১ কোটি পাঠ্যবই প্রয়োজন। এর মধ্যে মাত্র ৬ কোটি পাঠ্যবই বছরের প্রথম দিন বিতরণ করা হয়েছে। পরে আরও কিছুসংখ্যক বই পাঠানো হয়। এ কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বই পায়নি। গত বছরের মধ্যভাগে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, নতুন শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করে ২০১২ সালের পুরোনো শিক্ষাক্রমে ৪৪১টি পাঠ্যবই পরিমার্জন, দেশের বাইরে থেকে বই না ছাপানো, আগের দরপত্র বাতিল করে নতুন দরপত্র দেওয়া, দেরি করে পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা ও পাণ্ডুলিপি পেতে দেরির কারণে এবার সবার হাতে সব বই পৌঁছাতে আরও কয়েক মাস লাগতে পারে। নিয়মানুযায়ী চুক্তির পর ৪০ দিনের মধ্যে বই ছাপিয়ে দেওয়ার নিয়ম। কাগজসংকট না থাকলে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪০ লাখ কপি পাঠ্যবই পাঠানোর সক্ষমতা আছে ছাপাখানাগুলোর। এদিকে সোমবার শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ পরিকল্পনা কমিশনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের সব বই দেওয়া সম্ভব হবে’।

সরেজমিন নীলক্ষেত ও বাংলাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, যাদের অভিভাবক বা শিক্ষক বলে মনে হচ্ছে, তাদের পাঠ্যপুস্তক বের করে দেখাচ্ছেন বিক্রেতারা। নীলক্ষেতে চারটি বইয়ের দোকানে ক্রেতা সেজে খোঁজ নিলে বই বিক্রির প্রমাণ পাওয়া ‍যায়। এছাড়া রাস্তার পাশে বই বিক্রেতাদের বললেও কিছুক্ষণের মধ্যেই মার্কেটের ভেতরে নিয়ে গিয়ে বইয়ের সেট দেওয়া হয়।

শফিকুল ইসলাম একজন অভিভাবক বলেন, ‘স্কুল থেকে কোনো বই পাওয়া যায়নি। তবে বাজারে খুব সহজেই যে কোনো ক্লাসের সব বই পাওয়া যায়। আমার কাছ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির নতুন কারিকুলামের একটি ইংলিশ ফর টুডে বই ৩২০ টাকা রেখেছে। যা অন্য সময় ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়।’

বাংলাবাজারে একাধিক বই বিক্রেতার কাছে নতুন বছরের বই আছে কি না জানতে চাইলে তারা প্রথমে অস্বীকার করেন। তবে দেখা গেছে, ক্রেতার গতিবিধি এবং উপস্থাপনা ভেদে গোপনে বই বিক্রি করছেন তারা।

সরকার প্রেসের ১০ লাখ ফর্মার ৬০ হাজার নিম্নমানের বই জব্দ :নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানোয় সরকার প্রেস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ১০ লাখ ফর্মার ৬০ হাজার বই জব্দ করেছে এনসিটিবির মনিটরিং টিম। এনসিটিবির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রেসটির ঠিকানা দেখানো হয়েছে মীরপাড়া, ঢাকা। কিন্তু আসল ঠিকানায় বই মুদ্রণের কাজ চলছে না। আর মাতুয়াইলের হাজি বাদশা মিয়া রোডে একটি প্রেসে গোপনে নিম্নমানের কাগজে বই ছাপা হচ্ছে। এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এনসিটিবির উৎপাদক নিয়ন্ত্রক প্রফেসর আবু নাসের টুকুর নেতৃত্বে একটি পরিদর্শক টিম আকস্মিকভাবে সেখানে অভিযানে যায়। পরে বইগুলো জব্দ করে ধ্বংস করে এনসিটিবির মনটরিং টিম। সরকার প্রেস বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও একচেটিয়া বিনা মূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ পেয়েছিল। এবারও প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩ কোটি বই ছাপার কাজ পেয়েছে।

পিপি/ ইটি

Design & Developed by: BD IT HOST