পিপি ডেস্ক: স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) থেকে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বিল উত্তোলনপূর্বক আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে এই অভিযান চালায়।
দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম জানান, এলজিইডির প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দুদকের কাছে অভিযোগ আসে। যাচাই-বাছাই শেষে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে এনফোর্সমেন্ট টিম এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীসহ অন্যান্য প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। এছাড়াও এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রাপ্ত সকল কাজ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। রেকর্ডপত্রসমূহ পূর্ণাঙ্গরূপে পর্যালোচনা করে এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
এদিকে, যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নামজারি ও অন্যান্য ভূমিসংক্রান্ত সেবা প্রদানে হয়রানি ও অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের শুরুতে এনফোর্সমেন্ট টিম ছদ্মবেশে ভূমি অফিসের সেবা প্রদান সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে। একজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে, তার দাখিলায় ১৯ হাজার টাকার কথা উল্লেখ থাকলেও ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ৮০ হাজার টাকা আদায় করেছেন। টিম আরও তথ্য পায় যে, একই কর্মকর্তা নামজারি বাবদ একজনের কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা বাড়তি নিয়েছেন। এছাড়াও, ঐ অফিসে অন্য যে কোনো কাজের জন্য গেলেও ইউনিয়ন ভূমি সরকারি কর্মকর্তাকে টাকা দিতে হয় বলে অভিযানকালে জানা গেছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ঐ অফিসে নিজ উদ্যোগে কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করেই চার জন বহিরাগতকে দিয়ে কাজ করান—যা বিধিবহির্ভূত। অভিযানকালে সার্বিকভাবে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্যাবলি পর্যালোচনাপূর্বক এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযোগের বিষয়ে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানতে চেয়ে কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
এছাড়া, মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলাধীন নাকোল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নানাবিধ অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের ঝিনাইদহ সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা একাধিক সেবাগ্রহীতার বক্তব্য শ্রবণ করা হয়। ঐ অফিসে দালালের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করতে হয় বলে তথ্য পায় দুদক টিম—যা দূরীকরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলাধীন দক্ষিণ জিউধরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর আদায় ও ভূমিসংক্রান্ত অন্যান্য সেবা প্রদানে সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি ও ঘুষ দাবির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের বাগেরহাট জেলা কার্যালয় থেকে অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে টিমের সদস্যরা প্রথমে ছদ্মবেশে বিভিন্ন সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করে। টিম জানতে পারে যে, নামজারি, ডিসিআর ও দাখিলার নামে সরকার নির্ধারিত ফিসের বেশি টাকা না দিলে ইউনিয়ন ভূমি সরকারি কর্মকর্তা কোনো কাজ করেন না। এছাড়া, ঐ কর্মকর্তা এবং দপ্তরের অফিস সহায়কের সম্পর্কে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে অত্যন্ত নেতিবাচক ধারণা রয়েছে মর্মে টিম লক্ষ্য করে। অভিযানকালে ঐ অফিসে কোনো সিটিজেন চার্টার লক্ষ্য করা যায়নি। দুদক টিম কর্তৃক সহকারী কমিশনার (ভূমি), মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাটকে মনিটরিং জোরদার করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
পার্লামেন্ট প্রতিদিন/ এমআর