পিপি ডেস্ক: ময়মনসিংহ ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের ঐতিহাসিক ‘বীক্ষণ’মঞ্চ বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করেছে জেলা প্রশাসন। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছে। এবং অবিলম্বে এই ন্যাক্কারজনক কাজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এই মঞ্চ পুনরায় নির্মাণ করে দেবার দাবি জানাচ্ছে। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে ওঠা ময়মনসিংহের সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই প্রোজ্জ্বল বাতিঘরটিকে সরকারি ক্ষমতার দম্ভে যেভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তা কেবল একটি স্থাপনার বিনাশ নয়, বরং মুক্তচিন্তা, সৃজনশীলতা এবং একটি অঞ্চলের দীর্ঘ লালিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর নগ্ন ও পরিকল্পিত আক্রমণ। আমরা দেখছি সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে কতিপয় গোষ্ঠী শিল্প সংস্কৃতি সৃজনশীল জগতে নানাভাবে হামলা করছে।
দুর্বল ও হাস্যকর অজুহাত তুলে প্রশাসনের এই বর্বরোচিত আচরণ স্পষ্টতই ক্ষমতার চরম অপব্যবহার এবং সংস্কৃতি কর্মীদের প্রতি গভীর বিদ্বেষ ও চরম অবজ্ঞা প্রদর্শনের শামিল। গত চার দশক, প্রতি শুক্রবার যেখানে কবি-সাহিত্যিকদের পদচারণায় মুখরিত থাকত, যেখানে সাহিত্য, দর্শন ও শিল্পের অবাধ আলোচনা ও চিন্তার মুক্ত আদান-প্রদান ঘটত, সেই পবিত্র স্থানটিকে ধ্বংস করার মাধ্যমে প্রশাসন কেবল ইট-কাঠের কাঠামো ভাঙেনি, বরং ময়মনসিংহের আত্মাকে ক্ষতবিক্ষত করেছে এবং দেশের সংস্কৃতিচর্চার ধারাবাহিকতাকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে।
ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের ‘বীক্ষণ’মঞ্চ কেবল একটি অবকাঠামো ছিল না, এটি ছিল একটি জীবন্ত ইতিহাস, একটি দীর্ঘস্থায়ী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। এই মঞ্চের ধ্বংসযজ্ঞ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনবিরোধী ও কর্তৃত্ববাদী অপতৎপরতারই অংশ, যেখানে ভিন্নমত ও সৃজনশীলতাকে নির্মূল করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র নির্লজ্জভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে আরও লক্ষ্য করছি যে, জুলাই অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে লেখক শিক্ষক শিল্পীদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে হয়রানিমূলক মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের এবং তথাকথিত মব জাস্টিসের নামে অরাজকতা ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই ঘৃণ্য পরিস্থিতি একটি গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র গড়ে তোলার আকাঙ্খার সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা এবং জনগণের মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।এসব অপচেষ্টা জনগণের শিল্প সংস্কৃতি ও ইতিহাসচর্চার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আমরা আশংকা করছি। সরকার এগুলোর বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ না করলে তাদেরই এর দায় নিতে হবে।
আমরা অবিলম্বে এসব অন্যায়, অগণতান্ত্রিক ও সংস্কৃতিবিদ্বেষী অপতৎপরতার সাথে জড়িত সকল কুচক্রী ও দোষী ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। একই সাথে, আমরা আবারও অবিলম্বে ঐতিহ্যবাহী ‘বীক্ষণ মঞ্চের’ রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে পুনর্নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি। দমনপীড়ন, ভয়ভীতি ও ষড়যন্ত্র দিয়ে মুক্তচিন্তা ও সৃজনশীলতার অগ্রযাত্রা ঠেকানো যায় না। আমরা আশা করি বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ এসব আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জোরদার করবে।
পার্লামেন্ট প্রতিদিন/ এমআর