পিপি ডেস্ক: ফরিদপুরের সালথায় কুমার নদীর উপর একটি ব্রিজ না থাকায় দুই পাড়ের ১০ গ্রামের হাজারও মানুষের নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা হয়ে পড়েছে রশিটানা নৌকা। জনদুর্ভোগের শত বছর পার হলেও একটি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের বড়দিয়া ও দিয়াপাড়া গ্রামের মাঝামাঝি এমন দৃশ্য দেখা গেছে। নদের মধ্যে রয়েছে একটি কাঠের নৌকা। নৌকাটির দুই মাথা রয়েছে রশি দিয়ে বাঁধা। তবে নৌকায় মাঝি নেই। সাধারণ মানুষ নৌকায় উঠে নিজেরাই রশি টেনে পারাপার হচ্ছে। মাঝে মধ্যে রশি টানার মতো মানুষ না থাকলে শিক্ষার্থীসহ নারীরা এসে বসে থাকে যখন রশি টানার মতো মানুষ আসে তখন তাদের সাথে নদী পার হয়। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর দেখা গেল দুই শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন নারী এসে ওই পারের ঘাটে এসে বসে রয়েছে। তখন কোনো পুরুষ পারাপার হওয়ার মত ছিল না ঘাটে। ওই নারীরা রশি টেনে এপার আসতেও পারছে না। পরে একজন পুরুষ এসে রশি টেনে তাদের পার করে এপার নামিয়ে দিয়ে যায়।
সালথা উপজেলার বুক চীরে বয়ে গেছে কুমার নদ। এই নদীকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে হাট-বাজার। যার একটি এই বড়দিয়া বাজার। আশেপাশের অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ এই বাজারেই তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে। নদীর পূর্ব তীরে রয়েছে বড়দিয়া, মেহেরদিয়া, নারায়নদিয়া, ছোট লক্ষনদিয়া ও বড় লক্ষনদিয়া গ্রাম এবং পশ্চিম তীরে দিয়াপাড়া, রসুলপুর, রঘুয়ারকান্দি, জয়ঝাপ ও বালিয়া গট্টি গ্রামের অবস্থান। বালিয়া বাজার পাট পেঁয়াজ ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য উপজেলার মধ্যে একটি অন্যতম প্রাচীন বাজার। অত্র এলাকার কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য এই বাজারেই বাজারজাত করে থাকে। ব্রিজ থাকলে নদীর পূর্ব তীরের কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য সহজেই বালিয়া বাজারে নিয়ে যেতে পারতো। ব্রিজ না থাকায় ১০-১৫ কিলোমিটার ঘুরে তাদের কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে হয়। ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
বড়দিয়া গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী মিম আক্তার বলেন, কলেজ খোলা থাকলে মাঝে মাঝেই ঘাটে এসে বসে থাকতে হয়। কারণ আমরা মেয়েরা রশি টেনে নৌকা পার হতে পারি না। বর্ষা-মৌসুমে নদীতে ঢেউ থাকায় আরও বিপাকে পড়তে হয়। অপেক্ষা করতে হয় কখন একজন পুরুষ এসে নৌকার রশি টেনে আমাদের পার করবে। অনেক সময় ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ক্লাস টাইম শেষ হয়ে গেলে বাড়িতে ফিরে যেতে হয়। কুমার নদের এই ঘাটে ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে চরম বিপাকে পড়তে হয় আমাদের।
স্থানীয় কৃষক লিটন শেখ বলেন, শত বছর ধরে এই ঘাটে রশি টেনে নৌকা দিয়ে পারাপার হচ্ছে ১০ গ্রামের হাজারও মানুষ। কৃষকরা মাথা করে ফসল এনে ঘাটে এসে নৌকা দিয়ে পার হয়ে বাজারজাত করছেন। এতে আমাদের চরম কষ্ট হচ্ছে। দেশ যখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে, তখন একটি ব্রিজের অভাবে আমাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এটা দেখার কেউ নেই।
গট্টি ইউনিয়নের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, নদের ওই পাড়ে লক্ষনদিয়া ও বড়দিয়া গ্রামে ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি কওমি ও দুটি মহিলা মাদরাসা রয়েছে। এই পাড়ে জয়ঝাপ, গট্টি, রসুলপুর ও দিয়াপাড়া এলাকায়ও রয়েছে একাধিক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের খেয়া নৌকায় নদ পার হতে হয়। বিশেষ করে শিশু শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে নদ পার হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ সময়ের দাবি।
আবুল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, কুমার নদের এই ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের জন্য কয়েকবার জনপ্রতিনিধিদের অবগত করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ব্রিজের অভাবে আশপাশের অন্তত দশটি গ্রামের সাধারণ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে নদ পারাপার হচ্ছে। কৃষিপণ্য নিয়ে বাজারে যাওয়া-আশায় সময় নদ পারাপারে ভোগান্তিতে পড়তে। এসব গ্রামবাসীদের জেলা-উপজেলা শহরে যেতে হয় দুর্ভোগ নিয়ে। এমন অবস্থা এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ হওয়া খুবই জরুরি। ব্রিজটি নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাই।
সালথা উপজেলা প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, গট্টি ইউনিয়নের কুমার নদের ঘাটে একটি ব্রিজের খুব প্রয়োজন বলে স্থানীয় কয়েকজন আমাকে জানিয়েছেন। যাতে দ্রুত ঐখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ হয় আমরা তার চেষ্টা করছি।
পার্লামেন্ট প্রতিদিন/এমআর