দুপুর ১২:৪৮ । বৃহস্পতিবার । ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ । ২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি বার্তা
  5. খেলাধুলা
  6. খোলা কলাম
  7. চাকরি
  8. জাতীয়
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. পর্যটন
  12. ফিচার
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মতামত

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সাক্ষাৎকার: একটি ভিন্নমত

pp
সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪ ৩:৩৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

Spread the love

আকমল হোসেন
বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পুরোনো ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আছে। মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অনেক রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। এসব আন্দোলনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা সংঘশক্তির প্রকাশ ঘটিয়ে ক্ষমতাসীনদের চাপে ফেলে দাবি আদায় করে নিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যখন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বা আপসমূলক সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছে, তখন শিক্ষার্থীরা সঠিক কর্মপন্থা নিয়ে এগিয়ে গেছে।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে ছিল না। কিন্তু ছাত্ররা ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল করেছিলেন। তাদের এই দৃঢ়তায় পরবর্তী সময়ে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি পূরণের পথ প্রশস্ত হয়েছিল। ১৯৬৯ সালে ছাত্রদের ১১ দফা প্রণয়ন এবং তার ভিত্তিতে গণআন্দোলনের সূচনা আইয়ুব সরকারের পতন নিশ্চিত করেছিল। মওলানা ভাসানী ছাড়া অন্য রাজনৈতিক নেতারা সে সময় আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী শাসন উচ্ছেদে জোরালো কর্মসূচি দিতে ব্যর্থ হলে ছাত্ররা ডাকসুর নেতৃত্বে ১১ দফাভিত্তিক জানুয়ারি আন্দোলনের সূচনা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার আগেই ছাত্রদের তরফ থেকে স্বাধীন দেশের পতাকা তোলা হয়েছিল। ১৯৯০ সালে এরশাদের শাসনও উচ্ছেদ হয়েছিল ছাত্রদের তীব্র আন্দোলনের ফলে। বলা যায়, ছাত্ররা জাতির ক্রান্তিলগ্নে সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গণতন্ত্রের নাম করে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে নির্যাতন ও রক্তপাত ঘটিয়ে দেশ শাসন করছিল; সম্প্রতি তারও উচ্ছেদ ঘটেছে ছাত্র আন্দোলনের ফলে। সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন বাধ্য করেছে। শিক্ষার্থী-শ্রমজীবী মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণে আন্দোলনের তীব্রতা লাভ এবং তাদের ওপর শাসক শ্রেণির পাশবিক শক্তি প্রয়োগ ও গণহত্যা আন্দোলনের ইতিহাসে নতুন উদাহরণ তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীদের জুলাই আন্দোলনের শুরু থেকে শিক্ষকদের এক ক্ষুদ্র অংশ শিক্ষক নেটওয়ার্কের ব্যানারে তাদের পাশে থেকে সাহস-শক্তি জুগিয়েছে। তাদের আপসহীন দৃঢ়তা দৃষ্টিগ্রাহ্য ছিল। এর বাইরেও সমাজের নানা অংশের মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের সমর্থন জানিয়ে এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী ও লেখক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সভাপতি বা প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি মতামত দিয়ে থাকেন। লেখার সময় তাঁর সৃজনশীল ভাষা চয়ন তাঁকে গদ্য রচনার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। অথচ সাম্প্রতিক গণআন্দোলনের সময় ৪ আগস্ট দৈনিক সমকাল পত্রিকায় তিনি এমন এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, যা আন্দোলনকারীদের শক্তি ও সামর্থ্যের প্রতি অবমাননাকর। তিনি দু’পক্ষের সমঝোতার ওপর জোর দিয়ে কথা শুরু করছেন যখন ছাত্ররা আন্দোলনকে এক দফা দাবির আন্দোলনে পরিণত করার দিকে এগিয়ে গেছে। তারা যখন ফ্যাসিস্ট সরকারকে শেষ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার পরিস্থিতিতে উপনীত, তখন তিনি বলছেন– ‘দেশ ও জাতির জন্য এহেন হতাহতের ঘটনা অত্যন্ত ক্ষতিকর। উভয় পক্ষের মধ্যে একটা সমঝোতা জরুরি।’ তিনি আদতে আন্দোলনের শক্তি সম্পর্কে কোনো ধারণা পোষণ করতে অক্ষম ছিলেন।

ছাত্রদের আন্দোলন প্রথমে সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে শুরু হলেও, এক পর্যায়ে তা সামগ্রিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে পরিচালিত হতে থাকে। তাদের আন্দোলনের নামও পাল্টে যায়। তাদের দাবিকে শেষ পর্যায়ে তারা সরকার পতনের দাবিতে পরিণত করেছিল। অথচ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ওই সাক্ষাৎকারে আন্দোলনের লক্ষ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে নানা প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন, যেসব শিক্ষার্থীর বিবেচনায় ছিল বলে মনে হয় না। তিনি বলেছেন, ‘সম্পদের মালিকানা ব্যক্তিগত থাকবে, না সামাজিক হবে, পুঁজিবাদের কারণে মানুষে মানুষে যে বৈষম্য চলছে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনও চলছে। মানুষের এই ক্ষোভেরই প্রকাশ দেখি এ আন্দোলনে।’ বাস্তবে আন্দোলনকারীদের এ ধরনের চিন্তাভাবনার সঙ্গে আমরা পরিচিত ছিলাম না। সমাজ নিয়ে তাঁর নিজস্ব চিন্তাভাবনাকে তিনি কেন আন্দোলনকারীদের চিন্তা বলে চালাতে চাচ্ছেন?

ওই সাক্ষাৎকারে সমাধানের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা পৃথিবীব্যাপী সংকটের অংশ এবং এ ব্যবস্থা থেকে মুক্তি কোনো সাময়িক ব্যবস্থার মধ্যে দেখেন না। অথচ আমরা দেখলাম, আন্দোলনকারীরা শেখ হাসিনার সরকার ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত কাঠামোকে উচ্ছেদ করতে চেয়েছিল; তাদের আর কোনো বৃহত্তর লক্ষ্য ছিল না।

সাক্ষাৎকারের শেষ অংশে তিনি বলছেন, ‘আমি মনে করি, বর্তমান নেতৃত্বের পক্ষে (আন্দোলন) কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায় আন্দোলন দীর্ঘ সময় চালানোর চেষ্টা হলেও মানুষ রোজ রোজ রাস্তায় নামবে না। দু’পক্ষকে একটা সমঝোতায় আসতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সে সমঝোতা তৈরি করতে হবে।’ যেদিন তাঁর সাক্ষাৎকার প্রকাশ হলো তার আগের দিন শেখ হাসিনা আলোচনার জন্য গণভবনের দরজা খোলা বলে জানিয়েছিলেন। অন্যদিকে রক্তের পথ মাড়িয়ে শিক্ষার্থীরা কোনো আলোচনায় যাবে না বলে তার আগেই জানিয়ে দিয়েছিল।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর এভাবে মন্তব্য করাকে ইংরেজিতে সুইপিং রিমার্ক (ঢালাও মন্তব্য) হিসেবে গণ্য করা যায়। মজার ব্যাপার হলো, তাঁর অবাস্তব মন্তব্যের বিপরীতে পরদিন বিকেলের মধ্যে শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হলো।

অধ্যাপক চৌধুরী একজন বিদগ্ধ সমাজ নিরীক্ষণকারী ব্যক্তি হয়ে কীভাবে সমঝোতার কথা বলতে পারেন; কীভাবে বলতে পারেন– আন্দোলনকে মানুষ সমর্থন করবে না! উল্লেখ্য, ২৭ আগস্ট প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর আরেক সাক্ষাৎকারে তিনি আগের আন্দোলনগুলোর সঙ্গে বর্তমান আন্দোলনের পার্থক্য দেখাতে গিয়ে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততা ও ব্যাপক অংশগ্রহণের কথাও বলেছেন। এটা কি স্ববিরোধিতা বলে গণ্য হবে না?

ড. আকমল হোসেন: প্রাক্তন অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Design & Developed by: BD IT HOST