কুমিল্লা প্রতিনিধি: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কারণে এখন আওয়ামী লীগ মাঠে নেই। নেতা-কর্মীরা কেউ পালিয়েছেন, নয় আত্মগোপনে আছেন। আবার কেউ কেউ আটক হয়েছেন। তাই রাজনীতির মাঠে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। সেটাকে মাথায় রেখে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে আত্মগোপনে থাকা জামায়াত একটি বড় শক্তি হিসাবে সামনে আসতে চাইছে। ইতিমধ্যে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় জামায়াত শিবিরের কিছু নেতা কর্মী নির্বাচনের আগেই ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে চাঁদাবাজী সহ বিভিন্ন দখল বাণিজ্য শুরু করে দিয়েছে।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের পর গত ৫ই আগস্ট চৌদ্দগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় জামায়াতের নেতাকর্মীরা হিংস্র রূপে হামলা ভাঙচুর এবং ব্যাপক লুটপাট মত ভয়াবহ তান্ডব চালিয়েছে। এসময় তারা নিজ স্বার্থ হাসিল করার জন্য- বিভিন্ন ইউনিয়নের হাট বাজারে সিএনজি স্ট্যান্ড দখল থেকে শুরু করে, বাজার কমিটি ও মসজিদ এবং স্কুল কমিটির দায়িত্ব তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে, পেশী শক্তির দাপট দেখিয়ে একের পর এক দখল বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. কামরুল হুদার নির্দেশে প্রদান করায়- দীর্ঘদিন রাজপথে সক্রিয় অবস্থানে থেকে রাজনৈতিক মাঠ দাঁপিয়ে বেড়ানো, বিএনপির নেতাকর্মীরা কোন প্রকার উশৃংখলা পরিস্থিতি এবং অপ্রীতিকর ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। জামায়াত ইসলামীর মত অতি উৎসাহ নিয়ে কাজ করা থেকে বিরত থেকে, ধর্য্য সহকারে জনস্বার্থের জন্য করার মন-মানসিকতা সামনে এগুচ্ছে তারা। সবমিলিয়ে চৌদ্দগ্রামে জামায়াত বিএনপির শত্রুতা অচিরেই প্রকাশ্য রূপ নেয়ার আশঙ্কা বিরাজ করছে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
সূত্র জানায়, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে প্রায় ২৫ বছরে মিত্রতা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই মিত্রতার সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। দল দুটির নেতারা সম্প্রতি একে অপরকে কটাক্ষ করছেন। রাজনৈতিক বিষয়ে বিপরীতমুখী অবস্থান নিচ্ছেন। বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। বিপরীতে জামায়াত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে চাপ না দেওয়ার কথা বলছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের ক্ষমা নিয়েও দল দুটির দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। আর অপ্রকাশ্যে চলছে বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজস্ব লোকের পদায়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে অবস্থান সুসংহত করা নিয়ে ছাত্রদলের সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরোধও অনেকটা প্রকাশ্য। বিএনপির ধারণা, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে বেশি সমর্থন পাচ্ছে জামায়াত।
অবশ্য দু্’দলের কয়েকজন নেতা মনে করেন, মাঠে আওয়ামী লীগ না থাকায় গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকা জরুরি। নয়তো জাতীয় পার্টি যেভাবে আওয়ামী লীগের ‘গৃহপালিত বিরোধী দলে’ পরিণত হয়েছিল, সেই অবস্থার উদ্ভব হতে পারে।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে ১৯৯৯ সালে জামায়াতের সঙ্গে জোট বাঁধে বিএনপি। ২০০১ সালে জোটবদ্ধ নির্বাচন করে সরকার গঠন করে। সম্পর্কে উত্থান-পতন হলেও জোট ভাঙ্গেনি। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ আন্দোলন করে বিএনপি ও জামায়াত। ২০১৮ সালের নির্বাচনে নিবন্ধন হারানো জামায়াতের নেতারা বিএনপির প্রতীকে প্রার্থী হন। ‘রাতের ভোট’খ্যাত ওই নির্বাচনের পর দু’দলের সম্পর্কে ভাটা পড়ে। ২০২২ সালে দু’দল আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ভেঙে দিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে নামে। তবে ধরপাকড়ে বিএনপি পাশে থাকছে না– অভিযোগে যুগপৎ আন্দোলন থেকে সরে যায় জামায়াত।
পিপি/আরটি/আরকে