রাত ৮:৩৬ । শুক্রবার । ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ । ২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি বার্তা
  5. খেলাধুলা
  6. খোলা কলাম
  7. চাকরি
  8. জাতীয়
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. পর্যটন
  12. ফিচার
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মতামত

ছয় রাজবংশের নিদর্শন আছে লালমাই পাহাড়ে

pp
মে ৩, ২০২৫ ৫:০৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

Spread the love

কুমিল্লা প্রতিনিধি: ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্থাপত্যকীর্তি ও শিল্পশৈলীর নিদর্শনসমৃদ্ধ কুমিল্লার লালমাই-ময়নামতি অঞ্চল। জেলার দিগন্ত প্রসারিত সবুজ ভূমিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এ অনুচ্চ পাহাড়শ্রেণি। এ লালমাই-ময়নামতি অঞ্চলে কমপক্ষে ছয়টি রাজবংশের ৩৪ জন রাজার রাজত্বকালের অনেক কীর্তির চিহ্ন উন্মোচিত হয়েছে।

এ পাহাড় ঘিরে রয়েছে প্রত্নতত্ত্ব ভান্ডার, বিভিন্ন রাজবংশের প্রাচীন কীর্তি, অর্ধশতাধিক মুড়া বা টিলা, অসংখ্য প্রাচীন দিঘি-পুষ্করিণী, সেনানিবাস, বিজিবি সদর দপ্তর, মসজিদ-মাজার, মন্দির, বিশ্ববিদ্যালয় ও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও পর্যটনকেন্দ্র। দেশ-বিদেশের পর্যটক ছাড়াও এখানে শিক্ষাসফরে আসেন দূরদূরান্তের স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জ্ঞানপিপাসুরা। ফলে এ পাহাড়ি এলাকায় গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা। অসংখ্য লোকের কর্মসংস্থান ও জীবন-জীবিকার অবলম্বনও এ লালমাই-ময়নামতি পাহাড়।

ঢাকা-চট্টগ্রামের প্রায় মাঝামাঝি অংশে কুমিল্লা নগরীর প্রায় আট কিলোমিটার পশ্চিমে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর দীর্ঘ যে অনুচ্চ ও সরু পাহাড়শ্রেণি আছে এর দক্ষিণ ভাগ ‘লালমাই’ ও উত্তর ভাগ ‌‌‘ময়নামতি’ পাহাড় নামে পরিচিত। এখানে পাহাড় ও পাহাড়সংশ্লিষ্ট এলাকায় অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রাম রয়েছে। প্রায় ৩৩ বর্গকিলোমিটারের এই পাহাড়শ্রেণি ১৯ কিলোমিটার লম্বা এবং প্রায় আড়াই কিলোমিটার প্রশস্ত। পাহাড়ের উত্তর দিকের শেষ প্রান্তে পাহাড়চূড়ায় আছে রাণী ময়নামতির প্রাসাদ এবং দক্ষিণ দিকের শেষ প্রান্তে পাহাড়চূড়ায় রয়েছে চণ্ডীমুড়া মন্দির। ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পাহাড় ভেদ করে চলে গেছে। ময়নামতি পাহাড়ের প্রায় সব অংশ ও লালমাই পাহাড়ের কিছু অংশ নিয়ে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে কুমিল্লা সেনানিবাস।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, লাল মাটিতে গঠিত প্রাচীন ভূমির গঠন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বেশির ভাগ ভূ-তত্ত্ববিদ মনে করেন প্রায় ১৮ লাখ বছর আগে প্লাইস্টোসিন যুগে শুরু হয়ে প্রায় ১০ হাজার বছর আগেকার হলোসিন যুগে ভূ-গাঠনিক আন্দোলনজনিত কারণে বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলের মতো লালমাই ও ময়নামতি প্রভৃতি এলাকার ভূমি সৃষ্টি হয়। লালমাই-ময়নামতি পাহাড়শ্রেণির প্রায় সমগ্র এলাকা অসংখ্য প্রাচীন কীর্তি বা কীর্তির ধ্বংসাবশেষ এবং অর্ধশতাধিক মুড়া বা টিলা রয়েছে।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—রানি ময়নামতির প্রাসাদ বা দুর্গ, আনন্দ রাজার বাড়ি, চারপত্র মুড়া, নীলাচল পাহাড় ইত্যাদি। লালমাই-ময়নামতি অঞ্চলে খনন কার্যের ফলে এ যাবৎকালে অসংখ্য মূল্যবান প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে এবং উন্মোচিত হয়েছে প্রাচীন সভ্যতার অনেক নিদর্শন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ১২টি তাম্রশাসন, ৪ শতাধিক স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য ব্রোঞ্জ ও প্রস্তর নির্মিত মূর্তি, মাটির তৈরি অসংখ্য নিবেদন স্তূপ ও সিল, অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক (টেরাকোটা), স্বর্ণ-রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ নির্মিত অলংকার, প্রস্তর যুগের অস্ত্রশস্ত্র, ধাতু ও মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল ইত্যাদি।

লালমাই পাহাড়ি এলাকা ও এর আশপাশে অসংখ্য প্রাচীন দিঘি-পুষ্করিণীর অস্তিত্ব দেখা যায়। লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে আদিনামুড়া পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত হযরত ওয়ায়েছ করনী (রহ.)-এর আস্তানায় শাহ কামাল ইয়্যামনী (রহ.)-এর মাজার শরিফ। এই মাজার শরিফে বাৎসরিক উরস মাহফিলে দেশ-বিদেশের অসংখ্য ভক্ত অংশগ্রহণ করে থাকেন। এছাড়া দক্ষিণ প্রান্তের লালমাই পাহাড়চূড়ায় দুই একর ৬৮ শতক জায়গা জুড়ে চণ্ডী ও শিব নামক দুটি মন্দির অবস্থিত। ত্রিপুরাধিপতির বংশধর দ্বিতীয়া দেবী প্রতিষ্ঠিত চণ্ডী মন্দিরদ্বয় ১৩০০ বছরের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী। উত্তর প্রান্তের ময়নামতি পাহাড়ে রয়েছে ওয়ার সিমেট্রি বা যুদ্ধসমাধি ক্ষেত্র।

কুমিল্লায় অবস্থিত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা জানান, প্রস্তর যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের ক্রীড়াভূমি লালমাই ও ময়নামতি পাহাড়ি অঞ্চল। এখানে খননের মাধ্যমে ষষ্ঠ থেকে ১২ শতকের অসংখ্য প্রাচীন পূরাকীর্তি উন্মোচিত হয়েছে। এ অঞ্চলে ছয়টি রাজবংশের ৩৪ জন নৃপতির (রাজা) রাজত্বকালের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।

পার্লামেন্ট প্রতিদিন/ এমআর

Design & Developed by: BD IT HOST