বিকাল ৫:৫৭ । বৃহস্পতিবার । ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ । ২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি বার্তা
  5. খেলাধুলা
  6. খোলা কলাম
  7. চাকরি
  8. জাতীয়
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. পর্যটন
  12. ফিচার
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মতামত

প্রচলিত ইসলামী রাজনীতির সাথে পবিত্র কোরআনের সাংঘর্ষিকতা 

pp
ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৫ ৮:৩১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

Spread the love

 মোহাম্মদ শফিউল বাদশা শিপন: 

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মনোনীত দ্বীন ইসলামকে রাসূলুল্লাহ ( সা. )-এর মাধ্যমে পূর্ণতা দান করেছেন। তিনি “আমানু” তথা ইমানদারগণকে নির্দেশ দিয়েছেন পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করতে এবং নিষেধাজ্ঞা জারী করেছেন অন্য দ্বীন অন্বেষণ করতে। সুতরাং কোন ইমানদারের সুযোগ নেই ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন তালাশ করার। সুযোগ নেই এ দ্বীনের মধ্যে কিছু সংযোজন, বিয়োজন কিংবা পরিবর্তন, পরিবর্ধন করার।

বড়ই আফসোসের বিষয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে এক শ্রেণীর  সাম্প্রদায়িক (জন্মসূত্রে দাবিদার) মুসলিমের মধ্যে ইসলামে সংযোজন- বিয়োজনের প্রবণতা।

আধুনিক কালের পশ্চিমা সভ্যতার আগ্রাসী জোয়ারকে যৌক্তিক ভাবে মোকাবিলায় অক্ষম এক শ্রেণীর ইসলামী চিন্তাবিদ এক সময় সমাজতন্ত্র নামক মতাদর্শকে কিছুটা সংস্কার করে ইসলামের মধ্যে গ্রহণ করার চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন। বর্তমানেও ঐ মানসিকতার ইসলামী চিন্তাবিদগণ বিদ্দমান আছেন, মানব রচিত গণতন্ত্রকে ইসলামের মধ্যে আত্মীকরণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

গত শতাব্দীতে সমাজতন্ত্রের জয়-জয়কার চলাকালে তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদগণ বলেছিলেন, শুধু নাস্তিক্যবাদী চিন্তাটাকে বাদ দিলে সমাজতন্ত্রকে ইসলামের মধ্যে গ্রহণ করতে কোন বাধা নেই। সমাজতন্ত্রকে ইসলাম সম্মত প্রমাণের জন্য তাঁরা ‘ইসলামী সমাজতন্ত্র’ পরিভাষা চালু করেন।

বিগত ও বর্তমান শতাব্দীতে প্রভাব বিস্তার করে থাকা বিজাতীয় রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মতবাদ ‘গণতন্ত্র’ সম্পর্কেও একশ্রেণীর ইসলামী চিন্তাবিদ অনুরূপ ভাষ্য প্রদান করে গণতন্ত্রকে মুসলিম বিশ্বে গ্রহণযোগ্য করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। তারা বলছেন, শুধু সার্বভৌমত্বের প্রসঙ্গটি বাদ দিলে গণতন্ত্রকে ইসলামের মধ্যে গ্রহণে কোন সমস্যা নেই। ‘মাসিক পৃথিবী’ নভেম্বর ১৯৯১ সংখ্যায় বলা হয়েছে ‘ইসলাম ও গণতন্ত্রে সার্বভৌমত্ব সম্বন্ধে যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে সেটি বাদ দিলে গণতন্ত্রের বড় ৪টি পয়েন্টের সাথে ইসলামের কোন বিরোধ নেই’।

ড. ইউসুফ আল-কারযাভী তাঁর Priorities of the Islamic Movement in the coming phase’ গ্রন্থের ‘The Movement and the Political Freedom and Democracy’ শীর্ষক আলোচনায় গণতন্ত্রকে মেনে নেওয়ার ব্যাপারে জোর ওকালতি করেছেন।

বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব ও চিন্তাবিদ শাহ আব্দুল হান্নান তাঁর ‘ইসলামের প্রেক্ষিতে গণতন্ত্র’ শীর্ষক প্রবন্ধে গণতন্ত্র বিরোধী ওলামায়ে কেরামদেরকে যুগ চাহিদার প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্রকে মেনে নেওয়ার  আহবান  জানান। তাঁর মতে, গণতন্ত্রকে গ্রহণ করলে পাশ্চাত্যে ইসলামের যে আগ্রাসী ও একনায়কত্ববাদী ভাবমূর্তি রয়েছে তা দূর হবে।

গণতন্ত্রকে ইসলাম সম্মত ও মুসলিম সমাজে গ্রহণযোগ্য করার জন্য তারা ‘ইসলামী গণতন্ত্র’ পরিভাষা চালু করেছেন। অথচ গণতন্ত্রের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ, ইতিহাস, এর মূলনীতি ও আদর্শগুলোকে ইসলামী শরী‘আতের আলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করলে আমাদের কাছে স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয় যে, গণতন্ত্র একটি মানব রচিত শিরকী, কুফরী, জাহেলী মতবাদ। যা কখনো ইসলামের সাথে এক হবার নয়।  মানব রচিত এই মতবাদের কিছু বিষয়কে ইসলামাইজড্ করে গ্রহণ করা হ’লে, তা হবে দ্বীনের বিকৃতি সাধন বা গায়ের জোড়ে প্রতিষ্ঠিত ইসলামকে দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করার শামিল, যা আল্লাহ তা‘আলা কখনো গ্রহণ করবেন না (আল ইমরান ৩/৮৫)।

প্রচলিত ইসলামী রাজনীতির সাথে আল কোরআনের সাংঘর্ষিকতা কি কি ?

★ক্ষমতার লালসা ও স্বার্থবাদিতা : ইসলাম ক্ষমতার লোভ ও ব্যক্তিগত স্বার্থকে নিরুৎসাহিত করে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: “তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ গ্রাস করো না এবং শাসকদের কাছে ঘুষ দিয়ে জেনে-বুঝে অন্যদের সম্পদ আত্মসাৎ করার চেষ্টা করো না।” (সূরা বাকারা, ২:১৮৮)।  তবে ইসলামী রাজনীতিতে অনেক সময় ব্যক্তি বা দলের ক্ষমতা অর্জনের লড়াইয়ে ইসলামের এই নীতিকে উপেক্ষা করা হয়।

★ সহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পবিত্র কোরআন বলে: “ধর্মের ব্যাপারে জবরদস্তি নেই। সত্য পথ ও ভ্রান্ত পথের পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে গেছে।” (সূরা বাকারা, ২:২৫৬)। তবে কিছু ইসলামী রাজনৈতিক দল বা নেতা ভিন্নমত বা ভিন্নধর্মাবলম্বীদের প্রতি অসহিষ্ণু আচরণ করে, যা পবিত্র কোরআনের এই শিক্ষার বিপরীত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আগস্ট বিপ্লবের পর হতে প্রায় ৮৬ টি মাজার ও খানকা্ ভাঙচুর করা হয়েছে।

★ নারীর অধিকার ও মর্যাদা : ইসলামে নারীর শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সম্পত্তির অধিকার স্বীকৃত। কিন্তু ইসলামী রাজনীতির অনেক দল নারীর ভূমিকা নিয়ে সীমাবদ্ধ ধারণা প্রচার করে, যা পবিত্র কোরআনের নারী অধিকার বিষয়ক শিক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। উদাহরণ স্বরূপ,পবিত্র কোরআনে নারীর সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করেছে (সূরা নিসা, ৪:৭), কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে নারীর আর্থিক বা সামাজিক ক্ষমতায়নে বাধা দেওয়া হয়।

★ শান্তি ও সংহতির অভাব : ইসলাম যুদ্ধ নয়, সহজ সরল এবং শান্তির ধর্ম। পবিত্র  কোরআনে বলা হয়েছে: “আল্লাহ ফিতনা (অশান্তি) পছন্দ করেন না।” (সূরা বাকারা, ২:২০৫)। তবে ইসলামী রাজনীতি কখনও কখনও সংঘর্ষ, হিংসা বা চরমপন্থাকে সমর্থন করে,যা পবিত্র কোরআনের শান্তির বার্তার বিপরীত।

★ দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার অভাব:   ইসলামে দুর্নীতি হারাম: “তোমরা জমিনে দুর্নীতি সৃষ্টি করো না।” (সূরা আরাফ, ৭:৫৬)। কিন্তু ইসলামী রাজনীতির সাথে জড়িত কিছু ব্যক্তির দুর্নীতির ঘটনায় পবিত্র কোরআনের এই নির্দেশ লঙ্ঘিত হয়।

★ আদর্শিক বিভেদ : পবিত্র কোরআন ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বকে জোর দেয়: “তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” (সূরা আল ইমরান, ৩:১০৩)। কিন্তু ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ, দলাদলি ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এই ঐক্যের বার্তার বিরোধিতা করেন প্রকাশ্যে ।

★ অতিরঞ্জন ও চরমপন্থা :

ইসলাম মধ্যপন্থার শিক্ষা দেয়: “এভাবেই আমরা তোমাদেরকে একটি মধ্যপন্থী উম্মাহ বানিয়েছি।” (সূরা বাকারা, ২:১৪৩) , তবে কিছু ইসলামী রাজনীতিবিদ বা দল চরমপন্থা অবলম্বন করে, যা ইসলামের এই শিক্ষা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

★ সামাজিক ন্যায়বিচার উপেক্ষা: ইসলাম গরিব, মজলুম ও নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয় (সূরা নিসা, ৪:৭৫)। কিন্তু অনেক সময় ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার মোহে সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার উপেক্ষা করে।

★ রাজনীতিতে ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার : পবিত্র কোরআনে আল্লাহর কথা মানুষকে সৎপথে আনার জন্য বলা হয়েছে, তবে কোনো ধরনের শোষণ, ফায়দা বা ফন্দি তোলার উদ্দেশ্যে নয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: “তোমরা আল্লাহর আয়াতকে সামান্য মূল্যে বিক্রি করো না।” (সূরা বাকারা, ২:৪১)

কিন্তু ইসলামী রাজনীতিতে ধর্মের আদর্শকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার প্রবণতা সর্বচ্চো মাত্রায় দেখা যায়। এটি পবিত্র কোরআনের শিক্ষা থেকে স্পষ্টতই বিচ্যুতি।

★ধর্মের নামে ক্ষমতার  অপব্যবহার : ইসলামে বিষয়টা পরিষ্কার শাসকের দায়িত্ব জনগণের সেবা করা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। কিন্তু ইসলামী রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসার পর সেবার চেয়ে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা বেশি করা হয়।

পবিত্র কোরআন বলে: “তোমরা ন্যায়বিচার করো, এটি আল্লাহর কাছে প্রিয়।” (সূরা হুজরাত, ৪৯:৯)। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ইসলামী রাজনীতি ন্যায়বিচারের পরিবর্তে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে জর্জরিত পৃথিবী জোড়ে ।

★মত প্রকাশের স্বাধীনতার অভাব : ইসলামে ভিন্ন মতকে সম্মান করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: “তোমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে সত্য আগমন ঘটেছে। অতঃপর যারা ইচ্ছা করে, তারা বিশ্বাস করুক এবং যারা ইচ্ছা করে, তারা অবিশ্বাস করুক।” (সূরা কাহাফ, ১৮:২৯)। তবে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সময় বিরোধী মতকে সহ্য করতে পারে না এবং ভিন্ন মত দমন করার চেষ্টা করে এবং আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে থাকেন।

★ শিক্ষা ব্যবস্থায় পক্ষপাত : পবিত্র কোরআনে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সব ধরনের জ্ঞানকে ইসলামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলার কথা বলা হয়েছে। “তোমার পালনকর্তা মানুষকে কলমের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি তাকে শিখিয়েছেন যা সে জানত না।” (সূরা আলাক, ৯৬:৪-৫)। কিন্তু ইসলামী রাজনীতিতে প্রায়ই ধর্মীয় শিক্ষার একপাক্ষিক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এমনকি সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষম্য তৈরি করার চেষ্টায় লিপ্ত আছে।

★ উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং আঞ্চলিক বিদ্বেষ : ইসলাম সামগ্রিকভাবে মানবজাতিকে একটি উম্মাহ বা ভ্রাতৃত্বে বেঁধে ফেলার কথা বলে।  “হে মানবজাতি! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পার। ” (সূরা হুজরাত, ৪৯:১৩)। তবে ইসলামী রাজনীতি প্রায়ই উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষার নামে বিভাজন সৃষ্টি করে, যা ইসলামের সার্বজনীনতার বিরোধিতা করে।

★ চরম শাস্তির অপপ্রয়োগ: ইসলামে অপরাধীদের শাস্তির বিধান রয়েছে , তবে এটি ন্যায় বিচারের আওতায় কার্যকর করতে বলা হয়েছে। “যারা সঠিক পথে বিচার করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। ” (সূরা মায়েদা, ৫:৪২)। তবে ইসলামী রাজনীতিতে চরম শাস্তি বা শরীয়াহ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ব্যবহারের অভিযোগ উঠে প্রায়।

★ সামাজিক বৈষম্য এবং সুবিধাবাদ : পবিত্র কোরআনে ধনী-গরিবের মধ্যে সাম্যের কথা বলে এবং সম্পদকে সুষমভাবে বণ্টন করার ওপর জোর দেয়। “যাতে সম্পদ কেবল ধনীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়।” (সূরা হাশর, ৫৯:৭)। তবে ইসলামী রাজনীতিতে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ইসলামের এই নীতি লঙ্ঘন করেন হর হামেশাই পৃথিবীর প্রতিটা ধর্মিয় রাজনৈতিক দলের একেক জন নেতা সম্পদের দিকে তাকালেই পরিষ্কার বুঝতে পারা যায় ।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবেশ রক্ষার উপেক্ষা : ইসলামে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে: “আল্লাহ তায়লা দুনিয়ার ভারসাম্য রক্ষা করেছেন।” (সূরা রহমান, ৫৫:৭-৯)।  তবে ইসলামী রাজনীতির দলগুলো প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় অনেক সময় দায়িত্বহীনতা দেখায়।

★ সাম্প্রদায়িকতা এবং বিভেদ সৃষ্টি : ইসলাম ভ্রাতৃত্ব, সংহতি ও ঐক্যের কথা বলে। “তোমরা বিভক্ত হয়ো না।” (সূরা আল ইমরান, ৩:১০৩)। তবে ইসলামী রাজনীতিতে প্রায়ই সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেওয়া হয় এবং ধর্মের নামে বিভাজন তৈরি করা হয়।

★ আত্মপ্রচার ও আত্মম্ভরিতা : ইসলাম বিনয়কে উৎসাহিত করে এবং অহংকারকে হারাম বলে উল্লেখ্য করে। “আল্লাহ তায়ালা অহংকারী ও আত্মম্ভরীকে পছন্দ করেন না।” (সূরা লুকমান, ৩১:১৮)। তবে ইসলামী রাজনীতিবিদদের মধ্যে আত্মপ্রচার, আত্মম্ভরিতা এবং নিজেদের “সর্বোত্তম ধারক” বলে দাবি করার প্রবণতা দেখা যায় এবং বাস্তবিক ।

★ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি উদাসীনতা: ইসলামে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যেমন গরিব, এতিম, বিধবা, শ্রমজীবী এবং নিপীড়িতদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। “এতিমকে গলায় ধাক্কা দিও না এবং গরিবকে আহারের প্রতি উৎসাহিত করো।” (সূরা মাউন, ১০৭:২-৩)। তবে ইসলামী রাজনীতি প্রান্তিক জনগণের প্রয়োজনের চেয়ে মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত শ্রেণির সুবিধার দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে যাচ্ছে ।

★ অতীত গৌরবের অতিরিক্ত মোহ: ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো অতীতের খিলাফতের গৌরবময় ইতিহাসকে অতিমাত্রায় আদর্শ হিসেবে তুলে ধরে এবং আধুনিক বাস্তবতার চাহিদা বা প্রেক্ষাপট উপেক্ষা করে। অথচ পবিত্র কোরআন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার কথা বলে। “প্রত্যেক জাতির জন্য রয়েছে একটি সময়সীমা।” (সূরা ইউনুস, ১০:৪৯)।  এইসব বিষয় গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায়, ইসলামী রাজনীতির কার্যক্রম এবং পবিত্র কোরআনের সার্বিক শিক্ষা ও উদ্দেশ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফারাক তথা পার্থক্য রয়েছে। প্রচলিত গণতন্ত্রের রাজনীতি এবং ইসলাম ও পবিত্র  কোরানের মধ্যে বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, যেগুলো দৃষ্টিভঙ্গি, কাঠামো এবং নৈতিকতার উপর ভিত্তি করে আলাদা হয়ে যায়। নিচে এই পার্থক্যগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

১. শাসন ক্ষমতার উৎস:

★ গণতন্ত্র: প্রচলিত গণতন্ত্রে শাসন ক্ষমতার উৎস জনগণ। জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে, যারা আইন প্রণয়ন ও শাসনকার্য পরিচালনা করে।

★ ইসলাম ও পবিত্র কোরআন: ইসলাম অনুসারে শাসন ক্ষমতার চূড়ান্ত উৎস আল্লাহ। ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় শাসক এবং জনগণ উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ ও পবিত্র  কোরআনের আইন মেনে চলতে বাধ্য।

২. আইনের উৎস :

★ গণতন্ত্র: গণতন্ত্রে আইন প্রণয়ন করা হয় জনগণের ইচ্ছা এবং চাহিদার ভিত্তিতে। এটি পরিবর্তন যোগ্য এবং পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল।

★ ইসলাম ও পবিত্র কোরআন: ইসলামের আইন হলো পবিত্র কোরআন এবং পরবর্তীতে হাদিসের ভিত্তিতে নির্ধারিত। এসব আইন স্থায়ী এবং আল্লাহর বিধানের বাইরে পরিবর্তন যোগ্য নয়।

৩. নৈতিকতার মানদণ্ড:

★ গণতন্ত্র: গণতন্ত্রে নৈতিকতার মানদণ্ডে আপেক্ষিক এবং সমাজের রীতি-নীতির উপর নির্ভরশীল। এক দেশে যা সঠিক, তা অন্য দেশে ভুল হতে পারে।

★ ইসলাম ও পবিত্র কোরআন: ইসলামে নৈতিকতার মানদণ্ড আল্লাহর বিধানের উপর নির্ভরশীল এবং সার্বজনীন। যা পবিত্র কোরআন ও হাদিসে নির্ধারিত, তা সকল সময় এবং সকল স্থানে প্রযোজ্য।

৪. শাসকের ভূমিকা:

★ গণতন্ত্র: গণতন্ত্রে শাসক জনগণের সেবা প্রদানকারী হিসেবে কাজ করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের স্থিতি নির্ধারিত হয়।

★ ইসলাম ও পবিত্র কোরআন: ইসলামে শাসক একজন “খলিফা” বা প্রতিনিধি, যার প্রধান দায়িত্ব হলো আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করে জীবন বিধান বাস্তবায়ন করা।

৫. ব্যক্তিগত স্বাধীনতা :

★ গণতন্ত্র: গণতন্ত্রে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা অনেক বেশি গুরুত্ব পায় এবং এটি প্রায় সীমাহীন হতে পারে, যতক্ষণ না তা অন্য কারও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে।

★ ইসলাম ও পবিত্র কোরআন: ইসলামে ব্যক্তির স্বাধীনতা আছে, তবে তা ইসলামের মৌলিক নীতিমালা ও নৈতিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ।

৬. সমতা ও ন্যায্যতা :

★ গণতন্ত্র: গণতন্ত্র সমতার উপর জোর দেয়, তবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার কারণে বৈষম্য দেখা দেয়।

★ ইসলাম ও পবিত্র কোরআন: ইসলাম প্রকৃত সমতা ও ন্যায্যতার উপর ভিত্তি করে, যেখানে ধনী-গরিব, বর্ণ-গোত্র বা লিঙ্গ ভেদে কোনো বৈষম্য নেই।

৭. ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মীয় শাসন:

★ গণতন্ত্র: গণতন্ত্র সাধারণত ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে থাকে, যেখানে ধর্ম ও রাজনীতিকে পৃথক রাখা হয়।

★ ইসলাম ও পবিত্র কোরআন: ইসলাম ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করে না। এটি জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ধর্মীয় নির্দেশনার অধীনে শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে৷ (অবশ্য তা সুফি মতে নয়)

৮. নেতৃত্বের যোগ্যতা :

★ গণতন্ত্র: যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি নেতৃত্বে আসতে পারে, যদি তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়।

★ ইসলাম ও পবিত্র কোরআন: ইসলামে নেতৃত্বের জন্য ধর্মীয় জ্ঞান, নৈতিকতা, এবং আল্লাহভীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সারমর্ম: গণতন্ত্র মানুষের ইচ্ছাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়, যেখানে আইন ও নীতি পরিবর্তনশীল। পক্ষান্তরে ইসলাম এবং পবিত্র কোরআন আল্লাহর বিধানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় এবং এটি মানুষের ইচ্ছার ঊর্ধ্বে। তবে, গণতন্ত্রের কিছু দিক ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে, যেমন ন্যায়পরায়ণতা, পরামর্শের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ (শুরা), এবং জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকা।

বি:দ্র:  লেখাটা সুফিধারার দৃষ্টিকোন হতে নয় তা প্রচলিত ইসলামের দৃষ্টিকোন হতেই রচিত। সুফিধারা মতে প্রচলিত ইসলামী রাজনীতির  মধ্যে পার্থক্য কি কি? তা আগামি পর্বে তোলে ধরার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। এই পোস্ট টি তৈরি করতে গুরুভাই ফকির মুহসিন শাহ্ অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা করায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

লেখক: সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, সুফিবাদ সার্বজনীন ফাউন্ডেশন, কেন্দ্রীয় কমিটি।

Design & Developed by: BD IT HOST