ড. আনিসুর রহমান জাফরী
দরবারমূখী লোকদের মধ্যে সাংগঠনিক আনুগত্যের গুরুত্ব ও মাত্রা শূণ্যের কোঠায়। সবাই শাহেন শাহ্ ভাব নিয়ে আদেশে বিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠেন। তারা সাংগঠনিক আনুগত্য ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী হয় বিধায়, ঐক্য ঐক্য বলে কিছু নামের লিস্ট তৈরি করলেই ঐক্য হয় না। শো ডাউন আর ঐক্য এক বিষয় নয়। সাংগঠনিক মযবুত ঐক্যের জন্য জরুরী সাংগঠনিক সিলেবাস অধ্যয়ন, অনুসরণ ও আনুগত্য। আদেশ ও আনুগত্যের ভারসাম্য রক্ষা করা সাংগঠনিক একান্ত জরুরী বিষয়।
তরিকতী ভাইয়েরা জানেই না এর জন্য যে, কত প্রশিক্ষণ কর্মশালা, টিএস, টিসি, শব্বেদারী, রিপোর্টিং, সাপ্তাহিক, মাসিক বৈঠক, এয়ানত আদায় ও প্রদান, নিজের অর্থ ও মতের কুরবানী, আদেশ ও আনুগত্যের ভারসাম্যের গুরুত্ব অপরিসীম। সুন্নীয়তে বিশ্বাসীরা নিজকে গাউসুল আজম মনে করে সংগঠন বিষয়ে কিছু শিখতে চায় না বলে দির্ঘদিন পরিশ্রম করে হতাশ হয়েছি। সিলেবাস অধ্যয়ন, অনুসরণ, আনুগত্যের নজির স্থাপন করে সংগঠন সৃষ্টির কোরানিক গুরুত্ব, ত্যাগ ও প্রতিভা তরিকতীদের মধ্যে মোটেও নাই। ফোন দিলেই বলে আছি রে ভাই আছি, কাজের নামে ঠন ঠনা ঠন।
সবাই ব্যস্ত ছাগল গরু মহিষ সংগ্রহ করতে কিন্তু সাংগঠনিত বিচিক্ষণ, প্রজ্ঞাবান (পরিশুদ্ধ) মানুষ সংগ্রহ হচ্ছে কি না তা ভাবনার সময় কৈ? তাদের দরকার কিছু নাম সংগ্রহ আর নিজের প্রতিষ্ঠিত দরবারের মজমায় লোক সমাগমের পাল্লা ভারি করা।
দরবারমুখী থাকুন এটাই সবচেয়ে নিরাপদ কিন্তু কান্দে মুগুর পড়লে ঐক্য ঐক্য বলে চিৎকার করেন ক্যান? তখন নিরব থাকতে পারেন না? আবার ঐক্য চাইলে সাংগঠনিক সিলেবাস অধ্যয়ন, অনুসরণ, আনুগত্য করার ম্যান্টালিটি নিজের মধ্যে তৈরি করছেন না কেন? যা চান তা কি বুঝে শুনে চান? সংগঠন আর দরবার পরিচালনা এক বিষয় নয়! কর্মী পরিচলানা আর ভক্ত মুরিদ অনুসারী পরিচলানার পার্থক্য আর বুঝবেন কবে?
আপনারাও তো দেখছি গোদার পালের মত পদ-পদবী ও জনতা সুখ্যাতি চান? সাংগঠনিক দক্ষ, সৎ, যোগ্য, প্রজ্ঞাবান কর্মী তৈরি করতে চান না? জনতা আর মানুষ এক বিষয় নয়!
সংকেত
ঐশ্বরিক প্রেম বিশ্বাসের অধিক মানুষ সংগঠিত হলেও কোরান তাকে একা বলেছে। কারণ, মাওলার প্রেম গোলামীর দরবারে দেহের প্রভেদ থাকলেও মন ও প্রাণ এবং লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের মধ্যে অভেদ থাকে। সুরা মোমিনের ৬০ নং আয়াতে বলা হয়েছে “তোমরা (রবকে) একা হয়ে ডাকো আমি সঙ্গে সঙ্গে ডাকের জবাব দেব” -ভাবার্থ।
শক্তির পূঁজায় বিশ্বাসের ভিত্তিতে সংগঠিত জমায়েতকে বলে জনতা। জনতা মানুষ নয়, জনতা হলো ভেড়ার পাল। সমাজের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য, ধর্মান্ধের জন্য, পার্টির জন্য ভেড়ার পাল দরকার, প্রজ্ঞাবান মানুষ দরকার নেই। কিন্তু ঐশ্বরিক প্রেম বিপ্লব প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই সাংগঠনিক প্রেমিক প্রজ্ঞাবান দক্ষ নেতৃত্ব ও জনবলের দরকার। মাওলা আলী আ. বলেছেন- “সত্যের সাথী নাই, প্রেম ও সত্যের সাথী সত্য নিজে, তুমি প্রেম ও সত্য প্রতিষ্ঠার কাজ করতে গেলে দেখবে, মূর্খরা তোমার শত্রু হয়ে যাবে!”
দার্শনিক ড. এমদাদুল হক বলেন- “ভেড়া যেমন গোদার পেছনে ছুটে, জনতাও তেমন লিডারের পেছনে ছুটে। যারা দল, তরিকা, ফেরকা, সম্প্রদায় আর শাস্ত্রের উল্টা-পাল্টা ব্যাখ্যা নিয়ে মত্ত থাকে তারা স্বপ্ন দেখে রাজসিক সফলতার। রাজসিক সফলতা মানে নারী, গাড়ি, বাড়ি, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি।”
আধ্যাত্মিক সফলতা আসে প্রেমের পথে, শক্তি পূঁজার পথে নয়।সাধনা প্রেমের পথ! অপ্রেমিকের দল বেঁধে প্রেম হয় না। আবর্জনার স্তুপ হয়, হীরার স্তুপ হয় না। সিংহের যেমন পাল হয় না, প্রকৃত সাধকেরও তেমন দল (সাথী) হয় না।
সব দলই সাধকের কিন্তু সাধক কোনো দলের না। সব ধর্মই সাধকের কিন্তু সাধক কোনো ধর্মের না।
হয়তবা সাধক হয়ে নিরবে আত্মগোপন থাকুন! এটাই সবচেয়ে নিরাপদ! নয়তোবা সাংগঠনিক ঐক্য প্রচেষ্টায় নিজকে জিরো মনে করে সংগঠনিক সিলেবাস অধ্যয়ন, অনুসরণ ও নেতৃত্বের লোভ পরিহার করে নেতার আনুগত্য করুন! নইলে মুগুড়ে রোগ ঔষধে আরোগ্য হবে না দরকার কাঁধে মুগুড়।
লেখক: ড. আনিসুর রহমান জাফরী, চেয়ারম্যান, বিশ্ব মানবতা ও সংহতি ফাউন্ডেশন।