দুপুর ১:০৯ । বৃহস্পতিবার । ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ । ২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি বার্তা
  5. খেলাধুলা
  6. খোলা কলাম
  7. চাকরি
  8. জাতীয়
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. পর্যটন
  12. ফিচার
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মতামত

নিরীহ গাজাবাসীর মতো সুফিবাদে বিশ্বাসী নির্যাতিত সুফিরাও একদিন রুখে দাঁড়াবে

pp
এপ্রিল ২৬, ২০২৫ ৪:৫৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

Spread the love

মাহবুবুর রহমান: ইসরাইলি বাহিনী নিরহ গাজাবাসীর উপর অত্যচার নিপীড়নের কারণে আমরা মর্মাহত হয়েছি। এটা মানবতা ও মানবাধিকারের বড়ই লঙ্ঘন। বিশ্বের বিবেক যেন নাড়া দিয়ে উঠেছে। গোঠা মুসলিম জাতি তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। তারপরও নেতা নিয়াহু তার বর্বরতা থামিয়ে দেননি। হয়তোবা একদিন তাকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। আমরা তাকে ধিক্কার জানাই। আন্তর্জাতিক আদালতে তাঁর বিচার হওয়ার জোর দাবী জানাই। ইহুদি আর মুসলিমের দাঙ্গা মারামারি এটা বহুদিনের সংঘাত। ইতিহাসের পাতা খুললে তার বিভীষিকাময় চিত্র চোখের সামনে ফুঁটে উঠবে।

যখন মুসলিম হয়ে মুসলিমের কাছ থেকে নিপীড়নের শিকার হয় তখন বলার মতো আর কিছুই থাকে না। ইহুদিরা মুসলিমের উপর নির্যাতন নিপীড়ন চালাচ্ছে তখন সকল মুসলিম ধিক্কার জানাই। যখন একই জাতি একই দেশের মুসলিম হয়ে মুসলিমের বাড়ী ঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে তখন কে কাকে ধিক্কার জানবে? তখন মানবাধিকার কোথায়? ইহুদি নেতা গাজার বাসীর উপর নির্যাতন নিপীড়ন চালাচ্ছে তাঁর জন্য নেতা নিয়াহুম বিচার দাবী করি এবং জোর দাবী জানাচ্ছি আন্তর্জাতিক আদালতে তাঁর বিচার হওয়ার জন্য।

বিগত ২২ মার্চ ২০২৫ তারিখে ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে পাবনা জেলার দোগাছী ইউনিয়নের কায়েমখোলা গ্রামে অবস্থিত জিলানী জানশরীফ দরবার শরীফের পীর ও সুফিসাধক হযরত শাহসূফী দেলোয়ার আল জাহাঙ্গীর সুরেশ্বরীর বাড়ী স্থানীয় কতিপয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে মব তৈরি করে পীর দেলোয়ার আল জাহাঙ্গীরের প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী দরবার শরীফে ন্যক্কারজনকভাবে হামলা চালিয়ে বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দরবারের মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। সেই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে বাংলাদেশ থেকে শুরু করে সারাবিশ্বের মানুষ দেখেছে। প্রাণের ভয়ে দীর্ঘদিন বাড়ী যেতে পারেনি।

প্রশাসনের সহযোগিতায় ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ইং বাড়ী গেলে পরের দিন আবারও বাড়ীতে এসে হুমকি দিচ্ছে স্থানীয় প্রতিবেশী বাকি বিল্লাহ (৬০), পিতা-মৃত আবদুস সালাম; কাজী সাহাব উদ্দিন, মদিনাতুল উলুম মাদ্রসার সেক্রেটারি মাওলানা আবুদল হাই ফারুকীসহ একদল মবসৃষ্টিকারী। প্রকাশ্যে অগ্নিসংযোগ, লুঠপাট, হামলা, ভাঙচুর করার মুলহোতা বাকি বিল্লাহ, কাজী সাহাব উদ্দিন, আবুদল হাই ফারুকীসহ তার সহযোগীরা কি তাহলে আইনের উর্ধ্বে?

সুরেশ্বর, আটরশি, ফুরফুরা, মাইজভান্ডার, আজমীর, বোয়ালীশাহ কালান্দার, মাওলানা ফতেহ আলী শাহ ওয়াসি, নুরমোহাম্মদ নিজামপুরী, এনায়েতপুরী, শাহবাজ কালান্দার, শাহ জালাল, শাহ পরান, মাকদুম শাহ, মিরপুরের শাহ আলী ইত্যাদি দরবার শরীফ কি আজকের? বাংলাদেশে যত দরবার শরীফ আছে সব দরবার কোন না কোন সিলসিলা থেকে এসেছে। মাজার যদি খারাপ হয় বসেন। মাজার মানা পন্থী আর মাজার না মানা পন্থী একসাথে এক টেবিলে বসেন। পবিত্র কোরআন হাদিস সামনে রেখে আলোচনা করেন। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে না থাকলে মানার দরকার কি? আর যদি থাকে তাহলে মানবেন না কেন? তার অর্থ এই নয় মাজার ভাঙ্গার নামে লুঠপাট, অগ্নিসংযোগ করবেন। মানবাধিকার লঙ্ঘন করবেন?

মুসলিম জাতি সালাত আদায় করতেছে। কিন্তু সালাতে আমরা যা পড়ি তা কি মনোযোগ সহকারে অনুধাবন করি?
‘‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস-সালাওয়াতু ওয়াত-ত্বায়্যিবাতু; আস-সালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ; আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিছ ছালিহীন; আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।’’

‘‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।’’
এই লাইন গুলো ভালো ভাবে অনুবাধন করুন। নামাজে নিয়ত করেছেন আল্লাহর কিন্তু সালাতের মধ্যে সালাম দিচ্ছেন কাকে? আল্লাহকে সালাম দিচ্ছেন? নাকি সালাম দিচ্ছেন নবীকে? নাকি সালাম দিচ্ছেন সালিহীনদের? নাকি সালাম দিচ্ছেন নবীজির আওলাদদের? নাকি সালাম দিচ্ছেন ইব্রাহীম নবীজি ও উনার আওলাদদের? নামাজে আল্লাহর উপর নিয়ত করে আমরা কি নবীজি, উনার আওলাদ ও ছালিহীনদের সালাম দিচ্ছি না? এখানে ভালোকরে অনুধাবন করুন। এই ছালিহীনদের মাজার হয়। শিরিক বিদাত কুফুরিসহ নানা ধরণের ফতোয়া দিয়ে মাজার ভাঙ্গার সাথে লুঠপাটে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

মুসলিম ভাই ভাই। একই ভাষাভাষি, একই জাতি। ভূল হলে বসে সমাধান করেন। তা না করে ঘোষণা দিয়ে অগ্নিসংযোগ করে বাড়ী ঘর ভেঙ্গে মালমাল লুঠ করেছেন। ইসরাইলি চরিত্রের সাথে আপনাদের চরিত্রের অমিল কোথায়? ইসরাইলিরা গাজায় ভাঙ্গতেছে আপনারা এখানে। যাদের উপর হামলা অগ্নিসংযোগ করেছেন মালামাল লুঠ করেছেন তারাও গাজাবাসীর মতো ঘরহীন। অনাহারে আতংকে। গাজাবাসীকে বিশ্বের মানুষ সাহায্য সহযোগিতা করতেছে। পরিতাপের বিষয় মাজার ভাঙ্গা মানুষ গুলোকে কেউ সাহায্য করতেছে না। তাদের পাশে কেউ নাই। তারাও গাজাবাসীর মতো নিরীহ। ‘মুসলিম নাগরিক সমাজ ও ইমাম খতিব উলামা পরিষদ’ আরো নানা ধরণের ব্যানারে মাজারে ভাঙ্গচুর, হামলা, অগ্নিসংযোগ ও মালামাল লুঠ হয়েছে। সরকার থেকেও তাদের পাশে যেন কেউ নাই। এই গুলোকি মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? মুসলিমে তেহাত্তর ফেরকা। আমার ফেরকার সাথে মিল না হলে তাকে আমি ফতোয়া দিয়ে কাফের বানিয়ে লুঠপাট, অগ্নিসংযোগ, হামলা, মামলা দিয়ে নির্যাতন করতে পারি? এটা কোন ধরণের ইসলাম?

বাংলাদেশে যে সকল মাজার আক্রান্ত হয়েছে তার একটা তালিকা তুলে ধরা যাক ঢাকার ধামরাই উপজেলার বাটুলিয়া এলাকায় ‘বুচাই পাগলা (রহ.) এর মাজারে’ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মাজারটিতে শরিয়াহবিরোধী কাজ হতো না। মাজারে মাদক নিষিদ্ধ ছিল। মাজারে দানের টাকায় একটি মসজিদ পরিচালনা করা হতো, একটি অংশ যেত মাদ্রাসায়। এছাড়া অসহায় মানুষদেরও সহায়তা করা হতো। গত বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ৫ শতাধিক মানুষ উপজেলার সানোড়া ইউনিয়নের বাটুলিয়া এলাকায় কালামপুর-সাটুরিয়া আঞ্চলিক সড়কের পাশে মাজারটি ভাঙচুরে অংশ নেন। প্রায় দুই ঘণ্টা যাবত ভাঙচুর চলে। মাজার ভাঙচুরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সি মানুষ লাঠি হাতে মাজারের বিভিন্ন সরঞ্জাম ভাঙচুর করছেন এবং একটি এক্সাভেটর (ভেকু) দিয়ে মাজারের মূল ভবনটি গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। তাদের অধিকাংশই টুপি ও পাঞ্জাবি পরে ছিলেন।এই হামলায় অংশ নিয়েছিলেন কুশুরা দক্ষিণ কান্টাহাটি মসজিদের ইমাম মনিরুল ইসলাম। ধামরাই ওলামা পরিষদ, ইমাম পরিষদ, কালামপুর আঞ্চলিক ইমাম পরিষদ এখানে ছিল। গাজীপুরের পোড়াবাড়ি এলাকার ফসিহ উদ্দিন ওরফে ফসিহ পাগলার মাজারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সময় মাজারের সীমানা প্রাচীর, পাকা ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। পরে মাজারের বিভিন্ন আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আশির দশকে গড়ে ওঠা মাজার চত্বরে একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা ছাড়াও ফসিহ উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসা ও মসজিদ রয়েছে। একই দিন সকাল ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর এলাকায় দেওয়ানবাগ মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত চারজন আহত হয়েছেন। ২৫ আগস্ট সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নে আয়নাল শাহ দরগা নামে পুরনো একটি মাজার ভেঙে ফেলা হয়। শরীয়তপুরের জাজিরার বিলাশপুর ইউনিয়নের মেহের আলী মাদবরকান্দি গ্রামে অবস্থিত আরশেদ পাগলার মাজার ও নড়িয়ার মোক্তারেরচর ইউনিয়নের পোড়াগাছা গ্রামে অবস্থিত শালু শাহ মাজারে স্থানীয়রা হামলা চালায়। সোমবার রাতে সিলেটের খাদিম এলাকায় শাহপরান (র.) মাজারে আলেম-জনতার সঙ্গে দুর্বৃত্তদের সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হয়। রাত ২টা থেকে ভোর পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টাব্যাপী দুই পক্ষে সংঘর্ষ চলে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে ইসমাইল পাগলার মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। গত ৩ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর গ্রামের ইসমাইল পাগলার মাজার ও গত ২৯ আগস্ট কাজিপুর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের বামনজানি বাজারের পাশে আলী পাগলার মাজারও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। নোয়াখালী পৌরসভার লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার ফকির চাড়ু মিজি শাহ্ (র.) মাজার (দরগাহ বাড়ির মাজার) ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। একই দিন মাদারীপুরের শিবচরে দীপঙ্কর সাহা নামের এক কবিরাজের অস্থায়ী বসতবাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সাভারের কাজী জাবের আল জাহাঙ্গীর আল সুরেশ্বরীর বাড়ীতেও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় প্রেসক্লাবসহ দেশের বিভিন্ন প্রেসক্লাবেও মানবধিকার রক্ষার জন্য মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচী পালিত হয়েছে।

বাংলাদেশে মানবাধিকার কমিশনসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো তেমন সোচ্চার ভূমিকা রাখেনি বলে প্রতিয়মান হয়েছে। যে সকল মাজারে হামলা অগ্নিসংযোগ হয়েছে তাদের একজন দেলোয়ার হোসেন আল জাহাঙ্গীর আল সুরেশ্বরী তিনি বলেন, আমাদের উপর নির্যাতনও গাজাবাসীর চেয়ে কম নয়। গাজাবাসী নির্যাতিত হচ্ছে ভিন্নজাতি দ্ধারা আমার নির্যাতিত হচ্ছি আমাদের স্বজাতি দ্বারা। ভাই যখন ভাইকে আঘাত করে নির্যাতন করে নিপীড়ন করে তখন আমার বলার মতো কিছ্ইু থাকে না। এখন সারাক্ষণ নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। প্রতিনিয়ত হুমকি আসছে। যে কোন সময় আঘাত করতে পারে।

গাজাবাসী যদি নির্যাতনের কারণে জাতি সংঘের কাছে নেতানিয়াহুর বিচার চাই তাহলে আমরা কি বাংলাদেশে যে সকল মাজার ঘোষণা দিয়ে অগ্নিসংযোগ, হামলা, লুঠপাট, মাজার ভাঙ্গা হয়েছে তার জন্য বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারে দায়িত্বরত যারা আছে তাদের বিচার চাইতে পারি না?

সুফিবাদ সার্বজনীন ফাউন্ডেশন এর তথ্যমতে বাংলাদেশে প্রায় শতাধিক মাজারে হামলা, লুঠপাটসহ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। যদি এইভাবে চলতে থাকে এক সময় দেশ গৃহ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। সে দিন আর বেশী দূরে নয়, নিরহ গাজাবাসীর মতো একসময় সুফিবাদে বিশ্বাসী নিরহ মানুষ গুলোও প্রতি নিয়ত নির্যাতনের শিকার হতে হতে রুখে দাঁড়াবে। তাতে কোন সন্দেহ নেই।

লেখক: সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী।

পার্লামেন্ট প্রতিদিন/ এমআর

Design & Developed by: BD IT HOST