বিশেষ প্রতিবেদক: ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে পাবনা জেলার দোগাছী ইউনিয়নের কায়েমখোলা গ্রামে অবস্থিত জিলানী জানশরীফ দরবার শরীফের পীর ও সুফিসাধক হযরত শাহসূফী দেলোয়ার আল জাহাঙ্গীর সুরেশ্বরী গত ২২ মার্চ ২০২৫ তারিখে স্থানীয় কতিপয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে মব তৈরি করে পীর দেলোয়ার আল জাহাঙ্গীরের প্রতিষ্ঠিত এই ঐতিহ্যবাহী দরবার শরীফে ন্যক্কারজনক হামলা চালায়।
হামলাকারীরা দরবারের বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। শুধু তাই নয়, তারা দরবারের মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। দীর্ঘদিন বাড়ীর বাইরে থাকার পর উর্ধতন প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতায় ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ইং অবশেষে নিজ বাড়িতে আসে। বাড়ীতে আসার একদিন পর আবারও বাড়ীতে এসে হুমকি দিচ্ছে স্থানীয় প্রতিবেশী বাকি বিল্লাহ (৬০), পিতা-মৃত আবদুস সালাম; কাজী সাহাব উদ্দিন, মদিনাতুল উলুম মাদ্রসার সেক্রেটারি মাওলানা আবুদল হাই ফারুকীসহ একদল মবসৃষ্টিকারী।
এই হুমকির ফলে নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করতেছে জিলানী জানশরীফ দরবার শরীফের পীর ও সুফিসাধক হযরত শাহসূফী দেলোয়ার আল জাহাঙ্গীর সুরেশ্বরী। অগ্নিসংযোগ, লুঠপাট, হামলা, ভাঙচুর করার পর বাড়ীতে আসলে আবারও প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে বাকি বিল্লাহ, কাজী সাহাব উদ্দিন, আবুদল হাই ফারুকী। এলাকার সাধারণ মানুষসহ বিজ্ঞজনের অভিমত বাকি বিল্লাহ, কাজী সাহাব উদ্দিন, আবুদল হাই ফারুকী কি আইনের উর্ধ্বে? এই বিষয়ে পাবনা সদর থানার ওসি সাহেবের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি। পরে ডিউটি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওসি সাহেবকে বিষয়টি জানাবেন বলেন প্রতিবেদককে জানান।
উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ ২০২৫ তারিখের হামলার পর পীর সাহেবকে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। নিরাপত্তা ও আইনানুগ বিচার পাওয়ার আশায় এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, গত ২৩ মার্চ তারিখে পীর দেলোয়ার আল জাহাঙ্গীর ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করেন। উক্ত সভায় তিনি তার প্রতিষ্ঠিত দরবার শরীফে হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
তিনি দৃর্বৃত্তিকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানোর পাশাপাশি সরকার ও প্রশাসনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। পীর সাহেব তার বক্তব্যে বলেন, এই হামলা শুধু একটি সুফি স্থাপনার উপর আক্রমণ নয়, বরং এটি শান্তি ও সহাবস্থানের বিরুদ্ধে একটি সুগভীর ষড়যন্ত্র।
তিনি আরও বলেন, সুফিবাদ সবসময়ই শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার কথা বলে এসেছে এবং এই ধরনের উগ্রবাদী কার্যকলাপ কখনোই মেনে নেওয়া হবে না। জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত উক্ত প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধনে বিভিন্ন স্তরের সুধীজন, সাংবাদিক এবং পীর সাহেবের অনুসারীরা অংশ নেন। বক্তারা এই ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং অবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।
অবশেষে, উর্ধতন প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধানে পীর দেলোয়ার আল জাহাঙ্গীর গতকাল তার নিজ বাড়ি কায়েমখোলায় নিরাপদে ফিরে এসেছেন। তার সাথে পীরসাহেবের অনুসারীগণও প্রত্যাবর্তন করেছেন। পীর সাহেবের প্রত্যাবর্তন স্থানীয় এলাকাবাসী ও তার অনুসারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। তবে, হামলার শিকার দরবার শরীফের ক্ষয়ক্ষতি এবং ঘটনার মূল হোতাদের বিচার নিয়ে এখনও উদ্বেগ বিদ্যমান।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, এই ন্যক্কারজনক হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এর মাধ্যমেই ভবিষ্যতে এ ধরনের উগ্রবাদী কার্যকলাপের পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে এবং সমাজে শান্তি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।
পীর দেলোয়ার আল জাহাঙ্গীর এবং তার অনুসারীরা এখন প্রশাসনের কাছে দ্রুত ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছেন।
পার্লামেন্ট প্রতিদিন/ এমআর