বিশেষ প্রতিবেদক: কর্মজীবনের শেষ পর্যায় অবসরে যাওয়ার আর মাত্র ৫ মাস বাকী। নিরাপত্তা আর অসম্মানের ভয়ে কর্মস্থলে যোগদান করতে পারছে না চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার গৌড়স্থান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান মোহাম্মদ আজম খান।
প্রধান শিক্ষক যোগদান না করাতে স্কুলের শিক্ষকদের বেতনসহ নানা ধরণের দাপ্তরিক কাজের সমস্যা হচ্ছে বলে জানা যায়। কেন তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারছে না। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সেই চিত্র তুলে এনেছেন আমাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক।
প্রতিষ্ঠার সময় ৪ জন শিক্ষককে স্কুল কমিটি চাকুরীতে নিয়োগ দেন। পরবর্তীতে নিয়াগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আরো ৪ জন শিক্ষক বিদ্যালয়টিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ২০০৬ সালের ৩০ এপ্রিল প্রধান শিক্ষক হিসাবে সরকারী সকল বিধি-বিধান মেনে প্রধান শিক্ষক হিসাবে মোহাম্মদ আজম খান যোগদান করেন ।
শুরু থেকে নিজের সুনাম ও শিক্ষার মান বজায় রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে স্কুলটিতে একটি শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করেন প্রধান শিক্ষক। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে বিদ্যালটিতে স্কুল ম্যানাজিং কমিটির বদলাতে থাকে বারংবার। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোন প্রধান শিক্ষকের পক্ষে স্কুল ম্যানাজিং কমিটির বাইরে যাওয়া সম্ভবপর নয়।
এলাকার সাধারণ মানুষ ও স্কুল কমিটির সাবেক সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করলে অনুসন্ধানে জানা যায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দাপ্তরিক কাজও স্কুলের নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষা করা প্রধান শিক্ষকের নৈতিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্কুলের দুই জন শিক্ষকের রোষানলে পড়েন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আজম খান। তার মধ্যে একজন হলেন, মাওলানা আবদুস ছোবাহান। তিনি কাজী হিসাবে এলাকায় বেশ পরিচিত। আর একজন হলেন মাস্টার শামসুল আলম। তারা স্থানীয় শিক্ষক হওয়াতে নানা ধরণের অসুবিধা সৃষ্টি করে থাকেন বলে এলাকাবাসীর জানা যায়। একজন এলাকার কাজী হিসাবে বিবাহ তালকা ও রেজিষ্ট্রার হিসাবে সারাক্ষণ ব্যস্ত থেকে ঠিক সময়ে স্কুলে আসেনা এবং ক্লাসে পাঠদানে মনোযোগী হয়না বলে অভিযোগ আছে। আর একজন কোচিং নিয়ে ব্যস্ত থাকে। স্কুলের ক্লাস রুমে কোচিং করাতে না দেওয়াতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগে বলে অভিযোগ আছে।
২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আজম খান কে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বরখাস্ত করা হয় ।
এই বিষয়ে তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবু তালেব ও অফিস কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নুরুল ইসলামের কাছ থেকে উক্ত স্কুল সর্ম্পকে জানা যায়। এই স্কুল নিয়ে তখন থেকে নানা ধরণের আপত্তি নানা ধরণের তদন্ত হয়েছিল। কিন্তু কখনো কোন সময়ে প্রধান শিক্ষকের কোন দুর্নীতি বা আর্থিক অনিয়ম তদন্ত কমিটি পায়নি।
ক্ষোভের বশিভূত হয়ে স্থানীয় দুই শিক্ষক প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আজম খানকে স্থানীয় কিশোর গ্যাং কে কাজে লাগিয়ে প্রধান শিক্ষকে নাজেহাল করতে থাকেন বলে স্থানীয় সুত্রে জানা যায়। নিরাপত্তা জনিত কারণে প্রধান শিক্ষক আর স্কুলে যেতে পারে না। ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হওয়ার পর থেকে প্রধান শিক্ষকের জীবন হুমকি মুখে পড়লে তিনি জীবন নাশের আশংকায় আর স্কুলে যায়নি বলে জানা যায়। এরি মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রধান শিক্ষককে স্কুলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলে তিনি স্কুলে যান এবং ওখান থেকে শির্ক্ষাথী কর্তৃক নাজেহাল হয়ে চন্দনাইশে বাড়ী ফিরে আসেন।
এই বিষয়ে স্কুলের সাবেক ম্যানাজিং কমিটির সদস্য নুরুল হুদার সাথে ফোনে (০১৭২৭-৩৫৬৪৪৫) যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখানে প্রধান শিক্ষকের কোন দোষ নেই। স্থানীয় কাজী ও শিক্ষক আবদুস ছোবাহানের লেলিয়ে দেওয়া শিক্ষার্থীদের কারণে প্রধান শিক্ষক স্কুলে যেতে পারছে না। এই বিষয়ে প্রশাসনের সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী মনেকরি।
স্কুলের আজীবন দাতা সদস্য ফরিদ উদ্দিনের সাথে মোবাইলে (০১৮৫৫-৪৫৯৬৩৯) যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকের বাড়ী চন্দনাইশ উনি এসেছেন আমাদের সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য কমিটির কাজ হলো শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া। কিন্তু স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে শুধু মাত্র কাজী এবং মাওলানা আবদুস ছোবাহানের জন্য। তিনি বহুরূপী মানুষ। এতদিন ওলামা লীগ করতো এখন দেখি জামাতের নানা মিটিং-এ।
এই বিষয়ে স্কুলের দাতা সদস্য বজলুর রহমানের সাথে যোগযোগ (০১৮৯৬-১২৬০০২) করা হলেন তিনি বলেন, আমাদের সাবেক সাংসদ আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী স্কুলটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সহযোগীতা করে আসছেন। প্রধান শিক্ষক হিসাবে মোহাম্মদ আজম খান যথেষ্ট শ্রম দিয়েছেন। উনার বিরুদ্ধে অনেকে অভিযোগী দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। প্রধান শিক্ষকই রায় পেয়েছেন। শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীন কোন্দল এখন শিক্ষার্থীদের ভেতরও প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন। যার কারণে প্রধান শিক্ষক স্থানীয় না হওয়াতে বেকায়দায় পড়েছেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বসে সুরাহা করে দিতে পারেন।
এই বিষয়ে শিক্ষা অনুরাগী সদস্য মেহাম্মদ ওমর ফারুকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ (০১৭১৮-২৭৬৩৩৩) করা হলে তিনি বলেন, আসলে মাওলানা আবদুস ছোবাহান প্রধান শিক্ষককে মানতে চাইনা। তিনি নানা কুটকৌশলে প্রধান শিক্ষককে হটিয়ে দিয়ে নিজেই প্রধান শিক্ষক হতে চাই। স্থানীয় কিশোর গ্যাং দিয়ে ভয় লাগিয়ে এখন প্রধান শিক্ষক স্কুলে যেতে দিচ্ছেন না। এখন নাকি তিনি স্বঘোষিত প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে অফিস করেন।
এই বিষয়ে মাওলানা কাজী শিক্ষক আবদুস ছোবাহানের সাথে মোবাইলে (০১৮১৭-৭৭৪২১৩) যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ পত্র আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন ও কোর্টে অনিয়মের বিরুদ্ধে মামলা আছে। এই দুর্নীতি দমন কমিশন ও কোর্টের মামলার কপি চাইলে তিনি পরে দিবেন বলে জানান। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন বলে তিনি জানান। তিনি বান্দরবনের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের হাসনা পাড়া গ্রামের অধিবাসী কিভাবে চট্টগ্রামের লোহগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের কাজী হলেন জানতে চাইলে প্রতিবেদকের প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আজম খানের সাথে মোবাইলে (০ ১৮১৮-৬২০৪৯৪) যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ করা হয়েছে কোন অভিযোগে আমাকে দোষী করতে পারেননি প্রশাসন। আমার আর ৫ মাস চাকুরী আছে। চাকুরীর শেষ বয়সে এসে এতো লাঞ্চিত হতে হবে ভাবতেও পারিনি। আসলে আমিতো স্থানীয় নয়। আমি শুধু মাত্র জীবনের নিরাপত্তা পেলে আবার স্কুলে ফিরে যাবো।
এই বিষয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের সহযোগী চাই ।
এই বিষয়ে জানার জন্য লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মোবাইলে (০১৭৩৩-৩৩৪৩৫০) যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোন উত্তর দেননি।
(নোট-আগামী পর্বে কাজী মাওলানা আবদুস ছোবাহানের সম্পদ ও দুর্নীতির পর্ব প্রকাশ করা হবে)
পিপি/ আরটি