বিকাল ৩:১৭ । বৃহস্পতিবার । ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ । ২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি বার্তা
  5. খেলাধুলা
  6. খোলা কলাম
  7. চাকরি
  8. জাতীয়
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. পর্যটন
  12. ফিচার
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মতামত

সীমান্তে আরাকান আর্মি: নিরাপত্তাঝুঁকিতে বাংলাদেশ

pp
ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪ ৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

Spread the love

পিপি ডেস্ক: বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুধু অনিশ্চয়তার মধ্যেই পড়েনি বরং নতুন করে রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য তৈরি হয়েছে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জও। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে ঘিরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর এখন দক্ষিণ এশিয়ায়।

এদিকে বিশ্বের গণমাধ্যমে কক্সবাজার সীমান্তের পাশে যে কোনো মুহূর্তে নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষণা আসার সম্ভাবনার কথা প্রচার পাচ্ছে। রাখাইনকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছে ভারত-চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো—এমন সংবাদও এসেছে বিশ্ব মিডিয়ায়। এতে প্রশ্ন উঠেছে, ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কি নতুন সংকটে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ? নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের উচিত আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা। সেটা সরাসরি না হলেও ‘ব্যাক চ্যানেলে’ করতে হবে।

আরাকান আর্মি কারা: কাচিন ইন্ডিপেনডেন্ট আর্মির (কেআইএ) সহায়তায় ইউনাইটেড লিগ অব আরাকানের সামরিক শাখা হিসেবে আরাকান আর্মি গঠিত হয় ২০০৯ সালে। তাদের লক্ষ্য, একটি সার্বভৌম আরাকান রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা। ২০১৫ সাল থেকে পালেতোয়া টাউনশিপ এলাকায় আরাকান আর্মি সামরিক তৎপরতা শুরু করে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে তারা গত কয়েক বছর ধরে লড়াই চালিয়ে আসছে এবং গত শুক্রবার তারা রাখাইন ও পার্শ্ববর্তী চিন রাজ্য নিজেদের দখলে নেওয়ার দাবি করেছে। এখন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ২৭০ কিলোমিটারের পুরোটাই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে।

ঝুলে গেছে প্রত্যাবাসন, নতুন করে রোহিঙ্গা ঢলের শঙ্কা :
নতুন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আবারও রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বলা চলে, আরাকানের কার্যত সরকারই এখন আরাকান আর্মি। এর ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুধু বিলম্ব হবে না বরং দুরূহ হবে। কারণ সীমান্তের ওপারে এখন ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। যাদের অনেকেই আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে জান্তা বাহিনীর হয়ে লড়াই করেছে। এখন আরাকান আর্মি রাখাইন দখল করায় তারা রোহিঙ্গাদের কোনো আশ্রয় দেবে না। বরং আমাদের আশঙ্কা আরও রোহিঙ্গা এখানে আশ্রয়ের জন্য চলে আসবে। ইতিমধ্যে অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা চলে এসেছে। তাই বলা চলে রোহিঙ্গা সমস্যা আরও বাড়ছে, কমছে না।

একই রকম আশঙ্কার কথা জানালেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আরাকান আর্মি রাখাইন দখল করার পর রোহিঙ্গা সংকট আরো জটিল হচ্ছে। কারণ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াটি ছিল মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে। তাদের যেখানে প্রত্যাবাসন করার কথা সেই রাখাইন রাজ্য এখন আরাকান আর্মির দখলে। কিন্তু এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে আমাদের কোনো স্বাভাবিক যোগাযোগ নেই। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে আরাকান আর্মির অবস্থান অনিশ্চিত। কাজেই প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াটি এখন আটকে গেছে। উপরন্তু নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কাও বেড়ে গেছে।

নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ আরাকান আর্মি :
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এখন একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে, এর ফলে বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করবে কি না—জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মুনীরুজ্জামান বলেন, এটি অবশ্যই আমাদের নিরাপত্তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ সীমান্ত যাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। এর ফলে নানা রকম ভুল পদক্ষেপের আশঙ্কা থেকে যায়। এছাড়া এই সীমান্ত দিয়ে মানব পাচার, মাদক পাচার, অস্ত্র পাচার—সবকিছু চলে আসছে এবং আগামী দিনে এগুলো আরও বাড়তে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো উগ্রপন্থী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে আরাকান আর্মির কোনো দৃশ্যত যোগাযোগ বা সম্পর্ক আমরা দেখতে পাই নাই। কিন্তু এ ধরনের যোগাযোগ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয় বরং স্বাভাবিক।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, রাখাইনে যুদ্ধ চলমান। এ অবস্থায় সীমান্ত রক্ষা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ সেখানে মিয়ানমারের সেনারা নেই, আছে আরাকান আর্মি। এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য এক অর্থে হুমকি হতে পারে। এছাড়া সীমান্তে যখন এ ধরনের একটি গোষ্ঠী থাকে তখন তাদের মাধ্যমে দেশের মধ্যে থাকার অনেক উগ্রপন্থী সংগঠনের উৎসাহিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ জরুরি:
হুমায়ুন কবীর বলেন, আমার কাছে মনে হয়, আরাকান আর্মি আমাদের জন্য নিরাপত্তার চেয়ে কূটনৈতিক জটিলতাটি বাড়িয়েছে। কারণ তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। আমরা মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কি হবে সেটা আমরা স্থির করতে পারিনি। কাজেই কূটনৈতিক সম্পর্কের জায়গাটিতে একটু গভীর বিচার বিশ্লেষণ করে নীতিনির্ধারণ করতে হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মুনীরুজ্জামান মনে করেন, আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। যদি আমাদের রাষ্ট্রনীতিতে তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে অনেক রকম পন্থা থাকতে পারে যোগাযোগ স্থাপনের। সেটা ব্যাক চ্যানেল হতে পারে। অনেক রকম চ্যানেল ওপেন করার সুযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি ব্যাংককে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ হারানো মিয়ানমার সরকারকে ‘সীমান্ত ও রাখাইন সমস্যা নিয়ে করণীয় নির্ধারণের’ পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারকে বলেছি, তোমাদের সীমান্তে তোমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। এটা সম্পূর্ণভাবে ‘নন-স্টেট অ্যাক্টরের’ হাতে চলে গেছে। আমরা তো রাষ্ট্র হিসেবে ‘নন-স্টেট অ্যাক্টরের’ সঙ্গে আলোচনা করতে পারি না। প্রসঙ্গত, নন-স্টেট অ্যাক্টর হলো রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি।

তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলিসংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান সম্প্রতি এক বক্তৃতায় এ ধরনের যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দিয়েছেন। অন্যদিকে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, আমাদের জাতীয় স্বার্থে যা করণীয় সেটাই আমরা করব। তার লক্ষ্য হবে বাংলাদেশে অবস্থানরত ১২ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন।

তবে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। তারা বলছেন, এতে করে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে। এজন্য তাদের পরামর্শ যদি আরাকান আর্মি দীর্ঘদিন ধরে এই রাজ্যের দখলে থাকে তাহলে বাংলাদেশ বিষয়টি জাতিসংঘে তুলতে পারে। জাতিসংঘ তখন প্রস্তাব তুলবে। এই দুই পক্ষের মধ্যে মাঝামাঝি তখন অবস্থান নেবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী। তখন কিন্তু বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সুযোগ তৈরি হতে পারে। তবে এখানে বাংলাদেশ কতটা কূটনৈতিক দূরদর্শিতার সঙ্গে এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে সেটিই এখন দেখার বিষয়।

এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঝুঁকি এড়াতে নাফ নদীতে সব ধরনের নৌযান চলাচল সীমিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোধ ও যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় নাফ নদী ও স্থলসীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন।

পিপি/ ইটি

Design & Developed by: BD IT HOST