বিশেষ প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ার উপজেলার ৭নং জিরি ইউনিয়নের লুতু ডাকাতকে প্যানেল চেয়ারম্যান করতে মরিয়া প্রশাসন। এই ধরণের একটি কথা জিরি ইউনিয়নসহ বিজ্ঞ মহলে চাউর হয়েছে। এই কথার সুত্র ধরেই আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রত্যেকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের পদ শুন্য ঘোষণা করেছে মন্ত্রণালয়। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নেও চেয়ারম্যানের পদ শুন্য। জন সাধারণের সেবা নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন থেকে যুব উন্নয়ন অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যুব উন্নয়ন অফিসারের পক্ষে নিজের দপ্তরের কাজ করার পর পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভবপর নয়। জন সাধারণের সেবার স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে জিরি ইউনিয়ন পরিষদে মেম্বারদের মধ্য থেকে একজন প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়োগের বিষয়ে প্রশাসন উদ্যোগী হয়েছেন। সেই মোতাবেক ১১.০২.২০২৫ইং তারিখে জিরি ইউনিয়নের ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার নুর আয়েশা বেগম জেলা প্রশাসক বরাবরে প্যানেল চেয়ারম্যান হওয়ার আবেদন করেন বলে জানা যায়।
১৯.০২.২০২৫ইং তারিখে ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার নুর আয়েশা বেগম স্বাক্ষরিত এবং জিরি ইউনিয়নের সংখ্যা গরিষ্ঠ মেম্বারগণের স্বাক্ষরযুক্ত জেলা প্রশাসক বরাবরে ২য় আর একটি আবেদন করেন।
১৯.০২.২০২৫ তারিখে পটিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জিরি ইউনিয়নের সকল মেম্বারগণকে নির্বাহী কর্মকর্তার প্রশাসনিক কর্মকর্তার মাধম্যে বিকালে পটিয়া নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে হাজির হতে বললে ১০জন মেম্বার স্ব-শরীরে হাজির হয়। উপস্থিত ১০ মেম্বারের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নেন। সেই দিন ২ জন মেম্বার উপস্থিত না হওয়ার কারণে পুনরায় আবার মিটিং ডাকবে বলে জানান। কিন্তু পরে আর তাদের ডাকা হয়নি।
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার কখন ডাকবে সেই ডাকের অপেক্ষায় থাকানে জিরি ইউনিয়নের সকল মেম্বারগণ। পুনরায় তাদেরকে না ডেকে ০৮.০৫.২০২৫ইং তারিখ নির্বাহী অফিসারের ক্ষমতা বলে ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার ইয়াবা ব্যবসায়ী, অস্ত্রধারী ডাকাতকে ১নং প্যানেল চেয়ারম্যান করে জেলা প্রশাসক বরাবরে পত্র জারী করেন। যার স্মারক নং ০৫.৪২.১৫৬১.০২২.০৭.০০২.২৫.৭০১।
১৩.০৫.২০২৫ইং তারিখে নুর আয়েশা বেগম সংরক্ষিত ৪,৫,৬নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বারকে ১নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান করার জন্য পুন:রায় আরেকটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মেম্বারগণের স্বাক্ষরিত আবেদন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবরে দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৩য় বার আর্জি জানান।
১৫.০৫.২০২৫ইং তারিখে নুর আয়েশা বেগম সংরক্ষিত ৪,৫,৬নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বারকে ১নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান করার জন্য পুন:রায় আরেকটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মেম্বারগণের স্বাক্ষরিত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক রবাবরে ৪র্থ বার আবেদন করেন।
১৮.০৫.২০২৫ইং তারিখে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত চিঠি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে প্রেরণ করেন। যার স্মারক নং ০৫.৪২.১৫০০.৭০১.৭০.০১৪.২৩-৩০৮।
২১.০৫.২০২৫ইং তারিখে এই লুতু ডাকাতকে ১নং প্যানেল চেয়ারম্যান করে জেলা প্রশাসক যে পত্র জারী করেছে তা স্থগিত করার জন্য জিরি ইউনিয়নের সাধারণ জনগণ জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেন।
২৪.০৫.২০২৫ইং তারিখে পত্র দুইটির কার্যকারিতা স্থগিত/তদন্ত পূর্বক পরবর্তী কার্যক্রম করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উপ-সচিব, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রামে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক, পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে জিরি ইউনিয়নের ০৯ জন মেম্বারের স্বাক্ষরিত আরেকটি আবেদন লুৎফর রহমান প্রকাশ লুতু ডাকাতের ১নং প্যানেল চেয়ারম্যান পদ স্থগিত বা তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৫বার আবেদন করা হয়।
জিরি ইউনিয়নের ১নং প্যানেল চেয়ারম্যান করে যার নাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার ও জেলা প্রশাসক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে পাঠিয়েছেন তিনি লুৎফর রহমান চৌধুরী প্রকাশ লুতু ডাকাত। স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল মামলা নং-০৫/২০২৭। চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানায় অস্ত্র মামলা অভিযুক্ত আসামী। যার মামলা নং-২৪(১০)১৩ ধারা-১৪৩/১৪৮/১৪৯/৩০২/১৮৬/৩৫৩/৩০৭/১১৪ দ:বি।
বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩/৪ এবং পটিয়া থানার মামলা নং-২৮(১১)১৩, ধারা-১৭৪/১৪৮/১৪৯/১৮৬/৩৩২/৩৫৩/৩০৭/১১৪ দ:বি:
অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী মামলা- চট্টগ্রাম ও পটিয়া থানার এফআইআর নং-১২, জিআর-২৭৫/১২, তারিখ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২, ধারা-১৯(১) এর ৯(খ) ১৯৯০ সালের মাদক দ্রব্য আইনে লুৎফর রহমান চৌধুরী প্রকাত লুতু ডাকাত এজাহারভুক্ত আসামী।
এই বিষয়ে লুৎফর রহমান চৌধুরী প্রকাশ লুতু ডাকাতের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পা ভেঙ্গে হাসপাতালে আছেন বলে জানান।
এই বিষয়ে নুর আয়েশা বেগমের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার জিরি ইউনিয়নের বার জন মেম্বারের মধ্যে ০৯জন মেম্বার আমাকে ১নং প্যানালে চেয়ারম্যান করার জন্য লিখিত মতামত দিয়েছেন। প্রয়োজনে আবার প্রকাশ্যে বা গোপনে ভোট হউক। যাকে সম্মানিত মেম্বারেরা ভোট দিবে তিনি প্যানেল চেয়ারম্যান হবেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় সম্মানিত ০৯ জন জন প্রতিনিধির মতামতকে উপেক্ষা করে একজন তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ী ও ডাকাতকে প্যানেল চেয়ারম্যান করার জন্য প্রশাসন মরিয়া হয়ে উঠেছে।
কেন কী কারণে প্রশাসন বিশেষ করে উপ-পরিচালক লুতু ডাকাতের পক্ষে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিএনপি মতাদর্শের লুতু ডাকাত আওয়ামী মতাদর্শের। সেই জন্য হয়তোবা তিনি লুতু ডাকাতের পক্ষ নিয়েছেন। এছাড়াতো আর কোন কারণ আমি খোঁজে পাই না।
এই রকম একজন আইন অমান্যকারী মাদক ব্যবসায়ী ডাকাতকে কিভাবে চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক লুৎফর রহমান চৌধুরী লুতু ডাকাতকে জিরি ইউনিয়নের ১নং প্যানেল চেয়ারম্যান করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে তা সাধারণ জনগণের বোধগম্য নয়। এই লুতু ডাকাতের সাথে উপ-পরিচালকের কী সর্ম্পক তা প্রশাসনের খতিয়ে দেখা দরকার বলে বিজ্ঞ মহল মনে করেন।