চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে গত ৯ মাসে সংঘটিত চারটি কিলিং মিশনে ছয় জন নিহত হয়েছেন, যাদের প্রত্যেকেই চট্টগ্রাম আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রভাবশালী গোষ্ঠী সরোয়ার হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, এই ‘সিরিয়াল কিলিং’ ঘটনার নেপথ্যে রয়েছেন বিদেশে পালিয়ে থাকা কুখ্যাত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ খান ওরফে ‘বড় সাজ্জাদ’। পুলিশ বলছে, বড় সাজ্জাদের নির্দেশেই চট্টগ্রামে অবস্থানরত তার আস্থাভাজন ও বর্তমানে কারাবন্দি ‘ছোট সাজ্জাদ’ বাহিনী এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটিয়েছে।
জানা গেছে, গত ২৩ মে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বন্ধু ও এক নারীর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন ঢাকাইয়া আকবর (আলী আকবর)। চারটি মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তদের গুলিতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন এবং ২৫ মে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এর আগে ২৯ মার্চ বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় সরোয়ার হোসেন ও তার চার সহযোগীকে বহনকারী একটি প্রাইভেট কারে হামলা চালানো হয়। এতে গাড়িচালক মোহাম্মদ মানিক ও সরোয়ারের বন্ধু আবদুল্লাহ নিহত হন। সরোয়ার হোসেন প্রাণে বেঁচে যান। তদন্তে উঠে এসেছে, সেদিনের হামলার পেছনে ছিল জমি দখল, বালুর ব্যবসা এবং ছোট সাজ্জাদকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার জের। গত বছরের ২৯ আগস্ট অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় সরোয়ার হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মাসুদ কায়সার ও মোহাম্মদ আনিসকে। নিহতরা সরোয়ারের হয়ে এলাকায় গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে জানা যায়। এরপর গত বছরের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁওয়ে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় বালু ব্যবসায়ী মো. তাহসিনকে। তার সঙ্গে বালু ব্যবসা নিয়ে ‘ছোট সাজ্জাদ’ বাহিনীর বিরোধ চলছিল বলে পুলিশের ধারণা।
এক সময় সরোয়ার হোসেন ছিলেন বড় সাজ্জাদের ঘনিষ্ঠ সাগরেদ। তাদের সঙ্গে ছিলেন ‘ম্যাক্সন’ নামে এক অপরাধী। সাজ্জাদ খান একটি হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হলেও হাইকোর্টে খালাস পেয়ে বিদেশে পাড়ি জমান। সেখান থেকেই তিনি ‘ম্যাক্সন’ ও সরোয়ারকে দিয়ে চট্টগ্রামের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন। পরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সরোয়ার আলাদা হয়ে নিজ বাহিনী গঠন করেন এবং শুরু হয় দুই গোষ্ঠীর রক্তক্ষয়ী লড়াই।
ঢাকাইয়া আকবর হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী রূপালী বেগম বাদী হয়ে পতেঙ্গা থানায় মামলা করেছেন। মামলায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পরদিন সিডিএ আবাসিক এলাকার একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে সাজ্জাদ খানের বড় ভাই ওসমান আলী এবং তার বোনের ছেলে আলভীনকে আটক করে র্যাব-৭। র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) এ আর মোজাম্মেল জানান, আটকদের বিরুদ্ধে পতেঙ্গা থানায় মামলা রয়েছে। আমরা তাদেরকে থানায় হস্তান্তর করেছি।
পার্লামেন্ট প্রতিদিন/ এমআর