বিকাল ৫:৪০ । বৃহস্পতিবার । ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ । ২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি বার্তা
  5. খেলাধুলা
  6. খোলা কলাম
  7. চাকরি
  8. জাতীয়
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. পর্যটন
  12. ফিচার
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মতামত

কর্ণফুলীর ইতিহাস-ঐতিহ্যের মিয়াবাড়ি

pp
ডিসেম্বর ৭, ২০২৪ ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

Spread the love

জাহিদ হাসান হৃদয়: কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের মিয়ারহাট এলাকায় শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী জমিদার মনোহর আলী খানের সেই মিয়াবাড়ি এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একসময় জমিদারি কাজকর্মে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হিসেবে পরিচিত থাকলেও সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে জমিদার বাড়ির ইতিহাস-ঐতিহ্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, বড়উঠান মিয়াবাড়িতে প্রবেশ করতেই আছে বড় একটি পুকুর। পুকুরটিতে দুটি ঘাট রয়েছে। একটি ঘাট নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় সংস্কার করা হয়। পুকুরের দক্ষিণ পশ্চিম পাশে রয়েছে মসজিদ। মসজিদের পাশের ঘাটটি এখনো অক্ষত আছে। সেই আমলে নির্মিত মসজিদের কারুকাজ চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে বিশাল বিশাল দেওয়ালের ওপর নির্মিত মসজিদের ভেতরের দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ ও ঠান্ডা পরিবেশ যে কোনো মুসুল্লিকে প্রশান্তি দেয়। মসজিদের পাশেই কবরে শুয়ে আছেন জমিদারের বংশধররা। মূল বাড়ির সামনের কাছারি ঘরটি এখন ভেঙে গেছে। অবশিষ্ট কাছারি ঘরের মেজে আর অবশিষ্টাংশ। কাছারির মধ্যে রয়েছে মূল বাড়িতে যাওয়ার পথ। মূল বাড়িটির সামনে রয়েছে খোলা উঠান। স্থানীয় শিশু-কিশোরদের খেলতে দেখা যায় এই উঠানে। মূল বাড়িটির দেওয়ালের বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়েছে। ঘরের ভেতর আগাছায় ভরে গেছে। ঘরের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে রয়েছে সিঁড়ি। বাড়িটির আশপাশে অনেক পুরোনো লিচুগাছ, বেলগাছসহ বিভিন্ন ফল ও বনজ গাছ রয়েছে। গাছগুলোর বয়সও বাড়ির চেয়ে কম নয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক শ বছর আগে জনৈক জমিদারের ১৬তম প্রজন্ম জমিদার মনোহর আলী খান। ১৬৬৫ সালে তাদের পূর্বপুরুষ এখানে আসেন। কেউ কেউ বলে থাকেন রাজা শ্যামরায় তাদের পূর্বপুরুষ। তারা মূলত শায়েস্তা খানের বংশধর। শায়েস্তা খান তার জমিদারির ২৫ শতাংশ দেওয়ান মনোহর আলী খানকে দান করেছিলেন। সেখান থেকেই তাদের জমিদারি শুরু। পাকিস্তান আমলে জমিদারি প্রথা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তাদের জমিদারির অবসান ঘটে।

জানা যায়, জমিদারবাড়ির সামনের ঘরে বাইরের অতিথিরা এসে বসতেন। সেখানে খাজনাও আদায় হতো। বিচার-আচারও সেখানে হতো। মাটির নির্মিত ঐ ঘরের বিভিন্ন অংশ বর্তমানে ক্ষয় হয়ে গেছে। বাড়ির একপাশে ছিল ধানের বিশাল গোলা ও অপর পাশে ছিল বিনোদন স্থান। যেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া দ্বিতল ভবনটিতে ছিল উপরে ও নিচে তিনটি করে মোট ছয়টি কক্ষসহ দুই ফ্লোরে দুটি শৌচাগার। জমিদারবাড়ির ভবন নির্মাণে যে ইট ব্যবহার করা হয়েছে তা চার কোণা আকারের। দেয়াঙ পাহাড়ের মাটি দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা ইটগুলোর সঙ্গে চুন সুরকি দিয়ে স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়। স্থাপনার বয়স কয়েক শ বছর বলে ধারণা করা হচ্ছে। জমিদারের বংশধররা ষাটের দশক থেকে ভবনটিতে বসবাস করা বন্ধ করে দেন। সেই সময় বাড়ির পেছনে আরেকটি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। সেটি এখনো বসবাসের উপযোগী। জমিদারের বংশধররা গ্রামের বাড়িতে গেলে সেখানে বসবাস করেন। পুরোনো ভবনটির কোনো সংস্কার না হওয়ায় তা এখন বিলুপ্তির পথে।

ঘরের দেখভালের জন্য এর একপাশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন রহিমা আক্তার নামের এক মহিলা। তিনি জানান, বর্তমান মিয়া বংশের তিনজন ছেলে রয়েছে। তারা দেশের বাইরে এবং শহরে বসবাস করেন। মাঝে মাঝে এখানে এলেও আবার চলে যায়। প্রতি বছর একবার করে পুরো জমিদারবাড়ির ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয় বলে জানান তিনি।

জমিদার মনোহর আলী খানের ১৯তম বংশধর সাজ্জাদ উদ্দিন মিঠু বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষ ১৬৬৫ সালে জমিদারি শুরু করেন। সেই থেকে পূর্বপুরুষদের জমিদারি চলতে থাকে। দীর্ঘ কয়েক শ বছর জমিদারি চলার পর ১৯৫৪ সালের দিকে আমাদের জমিদারি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে ধীরে ধীরে জমিদারির অবসান ঘটে। এই জমিদার বাড়ির ইতিহাস আমরা জানলেও বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এ ইতিহাস জানে না। তাই এই জমিদারবাড়িটি সংস্কার করা খুবই প্রয়োজন, যাতে করে আগামী প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা এ জমিদারবাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে।’

স্থানীয় বড়উঠান ইউপি সদস্য সাজ্জাদ খান সুমন বলেন, ‘এটি অনেক পুরানো জমিদারবাড়ি। আমারে এলাকার জন্য গর্ব। ভবনটি কয়েক শ বছরের পুরোনো হওয়ায় তা সংস্কারের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। তবে এটি সংস্কার না হলেও মসজিদ, পুকুরের ঘাটসহ আশপাশের চলাচলের রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে।’

পিপি/ ইটি

Design & Developed by: BD IT HOST